পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

করেন। রবীন্দ্রনাথ বলেন, প্রমথ চৌধুরী যদি নূতন পত্রিকার সম্পাদক হন, তাহ’লে তিনি নিয়মিতভাবে লিখতে প্রস্তুত আছেন। মণিলাল তখন প্রমথবাবুকে গিয়ে ধরেন এবং তিনিও রাজি হন। নূতন পত্রিকা প্রকাশিত হ’ল “সবুজপত্র” নামে। তার সব দিকেই নূতনত্ব। না আছে বিজ্ঞাপন, না আছে ছবির বাহার, না আছে টুকিটাকি আলাপ-আলোচনা। ছোট্ট কাগজ, গায়ে এতটুকু ব্যবসাদারির গন্ধ নেই এবং লেখকরাও পারিশ্রমিকের আশা করতেন না। “সবুজপত্র”কে উপলক্ষ্য ক’রে কেবল রবীন্দ্র-প্রতিভাই মোড় ফিরে নূতন একদিকে যাত্রা করলে না, প্রমথবাবুর লেখনীও অত্যন্ত ক্রিয়াশীল হয়ে উঠে মাসে মাসে দিতে লাগল নব নব উপহার। “সবুজপত্র” প্রকাশ ক’রে মণিলাল যে বাংলা সাহিত্যের স্মরণীয় হিতসাধন ক’রে গিয়েছেন এ সত্য অস্বীকার করবার উপায় নেই।

 প্রমথ চৌধুরীর ভাষাকে বলতে পারি ছন্দোবদ্ধ গদ্য। ঠিক এই শ্রেণীর গদ্য রচনা বাংলায় আগে ছিল না। প্যারীচাঁদ ও কালীপ্রসন্নের কথ্য ভাষা এবং প্রমথ চৌধুরীর কথ্য ভাষা, এ দুয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে আকাশ-পাতাল। আলালী ভাষা হচ্ছে হেটো ভাষা। কিন্তু বীরবলী ভাষা অনায়াসেই ব্যবহার করতে পারেন বিদ্বজ্জনগণ— হাটে যা হয়ে উঠবে দুর্বোধ।

 কিন্তু প্রমথবাবু কেবল গদ্যের ওস্তাদ ছিলেন না, কাব্যের উপরেও তাঁর যে পরিপূর্ণ অধিকার ছিল, “সনেট পঞ্চাশৎ” রচনা ক’রে সেটাও তিনি প্রমাণিত করেছেন। আবার ছোট গল্প রচনাতেও তাঁর পাকা হাতের পরিচয় দেয় “চার ইয়ারী কথা” ও “আহূতি” নামে বই দুখানি। তাঁর আরো কয়েকখানি বই প্রকাশিত হয়েছিল। এখনো বাজারে পাওয়া যায় কিনা বলতে পারি না। কিন্তু তিনি

১১১