পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

ভক্ত এবং সেখানে রবীন্দ্র-বিদ্বেষীদের প্রবেশ একরকম নিষিদ্ধ ছিল বলাও চলে। সেখানে গীত হ’ত রবীন্দ্র-সঙ্গীত, আলোচিত হ’ত রবীন্দ্র-রচনা। সেখানে আমাদের ‘জাতীয় সঙ্গীত’ ব’লে গণ্য হ’ত রবীন্দ্রনাথের এই গানটি—‘বিধি, ডাগর আঁখি যদি দিয়েছিলে, সে কি আমার পানে ভুলে পড়িবে না।’ সকলে সমস্বরে এই গানটি যখন-তখন গেয়ে আমরা পাড়া কাঁপিয়ে তুলতুম। আমাদের নিয়মিত গায়ক ছিলেন বিখ্যাত সাহিত্যিক অজিতকুমার চক্রবর্তীদিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কবি অতুলপ্রসাদ সেনও সেই আসরে ব’সে গানের পর গান গেয়ে গিয়েছেন। নজরুল ইসলামও (তখন উদীয়মান) প্রায় এসে গলা ছাড়তেন। আর একটি খবর শুনলে অনেকেই বোধ করি অবাক হবেন। আচার্য অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর কেবল তুলি আর কলমই ধরেন না, গানের ধারও ধারেন। “ভারতী”র বৈঠকে এসে তিনি একাধিক স্বরচিত গানে নিজেই সুরসংযোগ ক’রে গেয়ে আমাদের শুনিয়ে গিয়েছেন। ও বৈঠকে যাঁরা আসতেন তাঁদের অনেকেই সাহিত্যে বা শিল্পে অমর হয়ে থাকবেন এবং তাঁদের কারুর কারুর কথা বলব যথাসময়েই।

 প্রমথ চৌধুরী প্রায়ই আসতেন “ভারতী”র বৈঠকে। গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যাম, সুগঠিত দেহ, সুন্দর মুখশ্রী, পরনে বিলাতী পোষাক। চেহারা দৃষ্টি আকৃষ্ট করে। প্রশান্ত মুখে গাম্ভীর্য আছে বটে, কিন্তু আলাপের সময়ে তা মুখর হয়ে ওঠে। হাতে সর্বদাই থাকে একটা সিগারেটের কৌটো। দীনেশচন্দ্রের স্মরণীয় চা-চিনির কথা এবং শরৎচন্দ্রের আফিমের গোলকের কথা পরে বলব, প্রমথবাবুর সিগারেটের কৌটোর কথাও উল্লেখযোগ্য। ভদ্রলোক সাধারণতঃ এসে পাশের ছোট টেবিলের উপরে সিগারেটের কৌটোটি রেখে একখানা ইজি চেয়ারের উপরে আসন গ্রহণ

১১৩