পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

করতেন। তারপর যত কথা কইতেন তত সিগারেট টানতেন, একটা সিগারেট নেববার আগেই আর একটা সিগারেট ধরাতেন। নিজেও ধূম্রের ভক্ত, অন্যান্য ধূম্রসেবকদেরও মনের দুঃখ বুঝতেন, পাছে তাঁকে সমীহ ক’রে আমরা কষ্ট পাই, সেই জন্যে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাঁর সামনে আমরা সকলেই অম্লানবদনে ধূমপান করতে পারি। সে আসরে আমরা ধূম্রপানের সরঞ্জাম লুকিয়ে ফেলতুম কেবল দুই জনের উপস্থিতিতে। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়।

 আসনস্থ হয়ে সিগারেট ধরিয়ে প্রমথবাবু বাক্যালাপ আরম্ভ করতেন। দীনেশচন্দ্র ও শরৎচন্দ্র ছিলেন গালগল্পের রাজা, কিন্তু প্রমথবাবু সে-রকম গল্প নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলাপ করতেন না। তিনি বলতেন সাহিত্যের গল্প, ললিত কলার গল্প, মনোবিদ্যা ও দর্শনের গল্প; রীতিমত জ্ঞানগর্ভ উচ্চশ্রেণীর আলোচনা। তাঁর অধীত বিদ্যার পরিধি এমন বিস্তৃত ছিল যে আমরা বিস্মিত হয়ে ভাবতুম, এত বেশী জেনেও তিনি এত কম লেখেন! প্রত্যেক বক্তব্য বিষয় নিয়ে যে তিনি স্বাধীনভাবে মস্তিষ্ক চালনা করেছেন, এটুকু বুঝতেও বিলম্ব হ’ত না। কথা কইতেন তিনি ধীরে ধীরে, মৃদু স্বরে। তিনি উচ্চশ্রেণীর কথক হ’লেও বক্তা ছিলেন না। শব্দের পর শব্দ নিয়ে তিনি কথার ইন্দ্রজাল রচনা করতেন বটে, কিন্তু কোন সভায় বক্তৃতা দিতে উঠলে তাঁর মৃদুকণ্ঠের বাণী অধিকাংশ শ্রোতার কান পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছত না। রবীন্দ্রনাথের ভবনে “বিচিত্রা” সভার হলঘরে ও অন্যত্র তিনি মাঝে মাঝে বক্তৃতা দিয়েছেন, কিন্তু তাঁর বেশীর ভাগ কথাই আমরা শুনতে পাই নি। ছোট ছোট ঘরে বৈঠকী আলোচনাতেই তাঁর সংলাপ জমে উঠত চমৎকার।

১১৪