পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

অপেক্ষাকৃত দরিদ্র। দেবেন্দ্রনাথের অনেক কবিতায় দার্শনিকতা আছে বটে, কিন্তু সুমধুর কাব্যরসের মধ্যে তার পৃথক অস্তিত্ব ধরা পড়ে না। অক্ষয়কুমারের দার্শনিকতা প্রায়ই কাব্যরসকে চাপা দেবার চেষ্টা করে। দেবেন্দ্রনাথের কবিতা সুযোগ পেলেই হাস্যময়ী হ’তে চায়, কিন্তু অক্ষয়কুমারের কবিতার মুখ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গুরুগম্ভীর। বিষয়বৈচিত্র্যেও দেবেন্দ্রনাথ শ্রেষ্ঠ, যদিও মিলের দিক দিয়ে তিনি অক্ষয়কুমারের চেয়ে দুর্বল।

 অক্ষয়কুমারের কবিতা অধিকতর মার্জিত ও সুশৃঙ্খল বটে, কিন্তু দেবেন্দ্রনাথের মত তা স্বতঃস্ফূর্ত ব’লে মনে হয় না, এখানে ওখানে চেষ্টার লক্ষণও আছে। সব চেয়ে অবাক হ’তে হয় দেবেন্দ্রনাথের ভূরি ভূরি উপমার বাহার দেখে। রবীন্দ্রনাথ উপমার রাজা, কিন্তু উপমায় এত নূতনত্ব তিনিও দেখাতে পারেন নি। কেবল তিনি কেন, আর কোন বাঙালী কবিও নন। অন্য কোন কবির হাতে পড়লে যে সব উপমা একেবারে উদ্ভট ও উপহাস্য হয়ে উঠত, তাদের নিয়েই দেবেন্দ্রনাথ নিজের কাব্যের আসর এমন জমিয়ে তুলেছেন যে, দেখলে বিস্ময়ের সীমা থাকে না। তার উপরে ছোট ছোট আটপৌরে সাদাসিধে শব্দের সাহায্যে হাসিখুসির ভিতর দিয়ে তিনি যে সব ঘরোয়া ছবি এঁকে গিয়েছেন, বাংলা সাহিত্যে তার তুলনাই নেই। সময়ে সময়ে তাঁর হাসির ভিতরেও থাকে জমাট অশ্রু। আর এক বিষয়ে অক্ষয়কুমারের সঙ্গে তাঁর পার্থক্য দেখা যায়। অক্ষয়কুমারকে দুঃখের কবি বললে অন্যায় হবে না; কিন্তু দেবেন্দ্রনাথ ছিলেন আনন্দের কবি, হাসির কবি, আলোর কবি।

 দেবেন্দ্রনাথ এলাহাবাদে ওকালতি করতেন এবং মক্কেল-মহলে তাঁর পসার ছিল যথেষ্ট। আইনের সঙ্গে কবিতার যোগসূত্র

১১৭