পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

কোথায় আছে জানি না, কিন্তু বাংলাদেশে গত যুগের অধিকাংশ শ্রেষ্ঠ কবির সঙ্গেই কোন না কোন দিক দিয়ে আইনের সম্পর্ক ছিল ঘনিষ্ঠ। যেমন মাইকেল মধুসূদন, বঙ্কিমচন্দ্র, হেমচন্দ্র, নবীনচন্দ্র, দ্বিজেন্দ্রলাল ও রজনীকান্ত সেন প্রভৃতি। দেবেন্দ্রনাথ যখন মকদ্দমার নথিপত্র ঘাঁটতেন না, তখন করতেন কবিতা রচনা। “অশোকগুচ্ছ”, “গোলাপগুচ্ছ”, “শেফালীগুচ্ছ” ও “পারিজাতগুচ্ছ” প্রভৃতি কয়েকখানি কাব্যপুস্তক সেই সাধনার ফল। “অশোকগুচ্ছ” পাঠ করলেই দেবেন্দ্রনাথের কবিত্বের সমস্ত বিশেষত্বের সঙ্গে সম্যকরূপে পরিচিত হওয়া যায়। গদ্যেও তাঁর হাত ছিল যে সুদক্ষ, সে প্রমাণও পাওয়া গিয়েছে মাঝে মাঝে। কিন্তু গদ্য নিয়ে তিনি বেশী নাড়াচাড়া করেন নি। অজস্র কবিতা লিখেছেন। তার মধ্যে ফরমাজী ও বাজে কবিতার সংখ্যাও অল্প নয় বটে, কিন্তু প্রত্যেকটির মধ্যে আছে পরম উপভোগ্য আন্তরিকতা ও বিশুদ্ধ কবি-চিত্তের আত্মপ্রকাশ। শেষের দিকে তাঁর কবিতার মধ্যে ধর্মভাবই প্রধান হয়ে উঠেছিল।

 বলরাম দে (এখন ডব্লিউ. সি. ব্যানার্জি) স্ট্রীটের উপরে দেবেন্দ্রনাথ একটি বিখ্যাত বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন, তার নাম “শ্রীকৃষ্ণ পাঠশালা”। তিনি কলকাতায় এসে সেইখানে বাস করছেন শুনে একদিন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলুম। সে বোধ হয় চল্লিশ কি একচল্লিশ বৎসর আগেকার কথা।

 গিয়ে কি দৃশ্য দেখলুম! তিনতলার ছোট্ট একটি ঘরের ভিতরে ছোট্ট একখানি চৌকীর উপরে শুয়ে আছেন বৃদ্ধ কবি—হাতে বাত, পায়ে বাত, সর্বাঙ্গে বাত, প্রায় পক্ষাঘাতের রোগীর মত পঙ্গু! চোখে বিষম পুরু কাঁচের চশমা, দৃষ্টিশক্তি প্রায় অন্ধের মত ক্ষীণ, ভীষণ রোগযন্ত্রণা; কিন্তু প্রসন্ন মুখে তার কোন চিহ্ণ নেই, কোন

১১৮