পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

অভিযোগ নেই— নির্বিকারভাবে মুখে মুখেই রচনা ক’রে যাচ্ছেন শ্লোকের পর শ্লোক এবং কাগজ-কলম নিয়ে ব’সে আর একজন তা লিখে নিচ্ছেন। সারা মন আমার বিস্ময় ও শ্রদ্ধায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠল। এমন অবস্থায় যে রচনাকার্য—বিশেষতঃ কাব্যরচনা চলতে পারে, সে ধারণা আমার ছিল না।

 তাঁর সঙ্গে আলাপ হবার পর থেকে সেই ঘরখানি আমার কাছে হয়ে উঠল তীর্থক্ষেত্রের মত। দিনের পর দিন প্রায় প্রতিদিনই তাঁর কাছে গিয়ে আশ্রয় নিতুম এবং সর্বান্তঃকরণ দিয়ে উপভোগ করতুম দারুণ রোগযন্ত্রণায় পরম অবিচল সেই সাধক কবির কাব্যগুঞ্জন ও সাহিত্যের বাণী। তাঁর মনের উপরে দেহের কোন প্রভাবই ছিল না।

 মৃত্যুশয্যাশায়ী রজনীকান্তের অসাধারণ ও অনাহত কাব্যসাধনা দেখে বিস্মিত হয়ে রবীন্দ্রনাথ পত্রে তাঁকে যে কথাগুলি লিখেছিলেন, এখানে তা স্মরণ হচ্ছে: ‘সেদিন আপনার রোগশয্যার পার্শ্বে বসিয়া মানবাত্মার একটি জ্যোতির্ময় প্রকাশ দেখিয়া আসিয়াছি। শরীর তাহাকে আপনার সমস্ত অস্থি-মাংস, স্নায়ুপেশী দিয়া চারিদিকে বেষ্টন করিয়া ধরিয়াও কোনোমতে বন্দী করিতে পারিতেছে না, ইহাই আমি প্রত্যক্ষ দেখিতে পাইলাম।... কাঠ যতই পুড়িতেছে, অগ্নি আরো তত বেশী করিয়াই জ্বলিতেছে। আত্মার এই মুক্ত-স্বরূপ দেখিবার সুযোগ কি সহজে ঘটে? মানুষের আত্মার সত্য-প্রতিষ্ঠা যে কোথায়, তাহা যে অস্থি-মাংস ও ক্ষুধাতৃষ্ণার মধ্যে নহে, তাহা সেদিন সুস্পষ্ট উপলব্ধি করিয়া আমি ধন্য হইয়াছি। সছিদ্র বাঁশীর ভিতর হইতে পরিপূর্ণ সঙ্গীতের আবির্ভাব যেরূপ, আপনার রোগক্ষত, বেদনাপূর্ণ শরীরের অন্তরাল হইতে অপরাজিত আনন্দের প্রকাশও সেইরূপ আশ্চর্য!’

১১৯