পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

{

যাঁদের দেখেছি

 তেতলার ছাদের সেই কুঠরির মধ্যে কবির সঙ্গে দেখা করতে আসতেন প্রত্যহই বহু সাহিত্য-সেবক। আমার মত নিয়মিতভাবে আসতেন সুধীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আর আসতেন শ্রীমোহিতলাল মজুমদার— কাব্যচর্চা শুরু করলেও তখনও তিনি কবি রূপে বিখ্যাত হন নি। আর একজনও প্রতি বৈকালে হাজিরা দিতেন, তিনি শ্রীকৃষ্ণ পাঠশালার প্রধান শিক্ষক (এবং পরে ভারতী বিদ্যাভবনের প্রতিষ্ঠাতা) স্বর্গীয় ভবতারণ সরকার। একদিন রবীন্দ্রনাথও এসেছিলেন, কিন্তু আমি সেদিন উপস্থিত ছিলুম না ব’লে দুই কবির সম্ভাষণ শোনবার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছিলুম। দেবেন্দ্রনাথের উপরে রবীন্দ্রনাথের শ্রদ্ধা ছিল অত্যন্ত, তাই তিনি নিজের বিখ্যাত কবিতাপুস্তক “সোনার তরী” তাঁর নামেই উৎসর্গ করেছিলেন। দেবেন্দ্রনাথ বয়সে রবীন্দ্রনাথের চেয়ে প্রায় পাঁচ বৎসর ও অক্ষয়কুমারের চেয়ে প্রায় দশ বৎসর বড় ছিলেন।

 প্রায় প্রতিদিনই আসতেন বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদকরা। সাক্ষাৎ বা আলাপ করতে নয়, কবিতা ভিক্ষা করতে। এমনি ছিল দেবেন্দ্রনাথেব দাক্ষিণ্য, কারুকেই ফিরতে হ’ত না শূন্যহস্তে। ব্যাধির তাড়না, শয্যা থেকে উঠতে বা নিজে কলম ধরতে পারেন না, তবু কোনদিন তিনি কোন সম্পাদককেই হতাশ করেন নি, নগণ্য পত্রিকার জন্যেও মুখে মুখে কবিতা রচনা ক’রে দিয়েছেন। তাগিদ মেটাবার জন্যে এই শ্রেণীর রচনা যে বিশেষভাবে উৎরে যেত না সে কথা বলাই বাহুল্য।

 দেবেন্দ্রনাথের আর একটি মহৎ গুণ, তাঁর মনে ছিল না ঈর্ষার নামমাত্র। কতদিন তাঁর কাছে গিয়েছি এবং কোনদিনই তিনচার ঘণ্টার আগে তাঁর কাছ ছেড়ে নড়ি নি, কিন্তু কখনো তাঁকে ঘূণাক্ষরেও অন্য কোন কবিদের নিন্দা করতে শুনি নি।

১২০