পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

তিনি কুৎসা করতেনও না, কুৎসা শুনতেনও না। সর্বদাই প্রশান্ত ও প্রসন্ন মনে বিরাজ করতেন নিজের কাব্য-তপোবনে। তাঁর বৈঠক ছিল যথার্থ সাহিত্যের বৈঠক। সেখানে ভাবের আদানপ্রদান চলত তর্কাতর্কির উত্তাপের ভিতর দিয়ে নয়, সখ্য, সদ্ভাব ও সম্প্রীতির ভিতর দিয়ে। এমন বৈঠক আজকাল তো আর দেখি না।

 ছেলেবেলা থেকেই মাঝে মাঝে কবিতা রচনার চেষ্টা করেছি, তখনও করতুম। একদিন দেবেন্দ্রনাথকে একলা পেয়ে ভয়ে ভয়ে ভাঁকে আমার একটি কবিতা শুনিয়ে দিলুম। দেবেন্দ্রনাথ উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে ব’লে উঠলেন, ‘চমৎকার, চমৎকার! Beautiful! হেমেন্দ্রবাবু, আপনি যে একটি বর্ণচোরা আম! আপনি যে একজন ভালো কবি, সেটা তো আমার জানা ছিল না! আপনার আরো কবিতা আছে? আমার কাছে নিয়ে আসবেন— অসঙ্কোচে!’

 ভেঙে গেল আমার লজ্জার বাঁধ। তারপর থেকে দেবেন্দ্রনাথকে একলা পেলেই আমি কবিতা নিয়ে করতুম আক্রমণ। তিনি যত শুনতেন, তাঁর শুনবার ইচ্ছা তত যেন বেড়ে উঠত। সাগ্রহে বলতেন, ‘আরো কবিতা আছে? আমাকে শোনাবেন। আপনার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল!’

 ভবিষ্যৎ যে কতখানি উজ্জ্বল এতদিনে তা আন্দাজ করতে পেরেছি। কিন্তু তখন তা পারি নি ব’লে দ্বিগুণ উৎসাহে কোমর বেঁধে কবিতা রচনায় নিযুক্ত হলুম। রোজই একটি দু’টি ক’রে কবিতা লিখে দেবেন্দ্রনাথকে শুনিয়ে আসি। ঊর্বশী ও পুরুরবার কাহিনী নিয়ে একখানি খণ্ডকাব্যও রচনা ক’রে ফেললুম। দেবেন্দ্রনাথ মন দিয়ে সব শুনতেন, আমাকে আরও লেখবার জন্যে উৎসাহ দিতেন এবং অন্য কারুকে কারুকে ডেকে বলতেন,

১২১