পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

‘হেমেন্দ্রবাবু সুন্দর কবিতা লেখেন, জানেন কি?’ কেবল তাই নয়, আমার কোন কোন কবিতার দুই-একটি লাইন মুখে মুখে তিনি পুনরাবৃত্তি করতেও পারতেন। দেবেন্দ্রনাথের কাছ থেকে প্রেরণা লাভ ক’রে মনের ঝোঁকে লিখে ফেলেছিলুম প্রায় দেড়শত কবিতা। তার মধ্যে কয়েকটি মাত্র কবিতা “নব্যভারত” ও “অর্চনা” প্রভৃতি মাসিক কাগজে প্রকাশিত হয়েছিল, বাকি কবিতাগুলি বন্ধ ক’রে রেখেছিলুম দেরাজের ভিতরে। কিছুদিন পরে নিজেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলুম, সেগুলি প্রকাশযোগ্য বা উল্লেখযোগ্য নয়।

 কিন্তু সেই সত্য কি দেবেন্দ্রনাথ বুঝতে পারেন নি? নিশ্চয়ই পেরেছিলেন। তিনি পাকা কবি, জ্ঞানী এবং গুণী। আমার সে কবিতাগুলির অসারতা সম্বন্ধে তাঁর কোন সন্দেহই ছিল না। তবু তিনি আমাকে নিরুৎসাহ করতে চান নি। কারণ তিনি জানতেন বীজে জলসঞ্চার না করলে বীজ পরিণত হয় না চারায়। নূতন লেখকের মনে প্রেরণা সঞ্চার না ক’রে বিরুদ্ধ সমালোচনা করলে ভবিষ্যতে তার সফলতা সম্বন্ধে সংশয় থেকে যায়। নতুন লেখকরা মানুষ হ’তে পারে দেবেন্দ্রনাথেরই মত দরদী শিক্ষকের কাছে।

 কবিতাগুলিরও পরিণাম শুনুন। মমতাবশতঃ নিজের হাতের কাজকে সেদিন পর্যন্ত নষ্ট করতে পারি নি। আমি পারি নি, কিন্তু আমার কনিষ্ঠ পুত্র পেরেছে। কবিতা-লেখা কাগজগুলো ইন্ধনের মত ব্যবহার ক’রে ফেলে দিয়েছে উনুনের ভিতরে। কিন্তু সে তো জানে না, দেবেন্দ্রনাথ তাদের ভিতরেই দেখতে পেয়েছিলেন আমার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎকে! তবে আমার ভবিষ্যৎকে উজ্জ্বল করতে না পারলেও তারা যে অবশেষে উনুনের ভিতরটা উজ্জ্বল করতে পারলে, এইটুকুই যা সান্ত্বনা।

১২২