পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

 অক্ষয়কুমারের জন্ম ১৮৬৫ খৃষ্টাব্দে ও মৃত্যু ১৯১৮ খৃষ্টাব্দে। হেয়ার স্কুলের পাঠ শেষ করবার আগেই তিনি অফিসে কেরাণীগিরি করতে বাধ্য হন। পুরাতন “বঙ্গদর্শন” ও অন্যান্য পত্রিকায় তাঁর রচিত কবিতা সাদরে গৃহীত হ’ত। “প্রদীপ”, “কনকাঞ্জলি”, “ভুল”, “রজনীর মৃত্যু”, “এষা” ও “শঙ্খ” নামে তাঁর কয়েকখানি কবিতাপুস্তক আছে। বাংলা দেশের অধিকাংশ বিখ্যাত কবিই গদ্য রচনার নমুনাও রেখে গিয়েছেন। কিন্তু অক্ষয়কুমার কোনদিনই গদ্যে হাত দেন নি।

 বিহারীলালের প্রভাব সম্পূর্ণরূপে এড়াতে না পারলেও তাঁর যে নিজস্ব রচনাভঙ্গী, স্বকীয় কাব্য-বৈভব ও গভীর ভাবসম্পদ ছিল, একথা কোনক্রমেই অস্বীকার করা যায় না। যে সঙ্গীত কানে শোনা যায় না, যে সঙ্গীত প্রাণে অনুভব করতে হয়, তাঁর কবিতার মধ্যে তারও অভাব ছিল না। তিনি জাতকবি। বাংলা কাব্যসাহিত্যের ইতিহাসে তাঁর নামের মহিমা ক্ষুণ্ণ হবে না। যদিও রবীন্দ্রনাথের মত জীবনকে তিনি সব দিক দিয়ে সমগ্রভাবে দেখতে পারেন নি এবং যদিও তাঁর শব্দসম্পদ ও ছন্দবৈচিত্র্য বিশেষরূপে উল্লেখযোগ্য ও আধুনিক যুগের উপযোগী নয়, তবু রবীন্দ্রনাথের সমসাময়িক কালের অধিকাংশ কবির চেয়ে তিনি উচ্চাসনের দাবি করতে পারেন।

 অক্ষয়কুমারের সব বই একসঙ্গে বাঁধিয়ে রাখলেও আকারে বৃহৎ হবে না। তাঁর সাহিত্য-শ্রম স্মরণীয় নয়। তিনি তাড়াতাড়ি বা খুব বেশী লিখতে পারতেন না। অনেক দিন অন্তর তাঁর এক একটি কবিতা জন্মলাভ করত। তিনি চিন্তা করতেন বেশী, কলম ধরতেন কম। তাঁকে জিজ্ঞাসা ক’রে জেনেছি, কখনো কখনো একটিমাত্র কবিতা রচনা করতে তাঁর কেটে গিয়েছে দিনের পর দিন। মাঝে

১২৪