পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

সন্ধ্যার মুখে তিনি বাড়ী থেকে বেরিয়ে পড়তেন, তারপর গিয়ে বসতেন বিভিন্ন সাহিত্য বৈঠকে। সাহিত্য-সম্পর্কীয় আলোচনায় যোগ দিতেন বটে, কিন্তু তিনি রবীন্দ্রনাথ, দ্বিজেন্দ্রলাল, মহারাজা জগদিন্দ্রনাথ, অমৃতলাল বসু, প্রমথ চৌধুরী বা শিল্পাচার্য অবনীন্দ্রনাথের মত সংলাপে বিশেষ শক্তি বা সাহিত্যরসের পরিচয় দিতে পারতেন না। যখনই ওঁদের কাছ থেকে ফিরে এসেছি তখনই মনে হয়েছে, আজ কোন নূতন কথা শুনে বা শিখে এলুম। অক্ষয়কুমারের কাছে গিয়ে কোনদিন তা মনে হয় নি।

 “সাহিত্য” সম্পাদক সুরেশচন্দ্র সমাজপতি তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। সুরেশচন্দ্র ছিলেন রীতিমত কটুভাষী সমালোচক। কিন্তু কোনদিন তিনি অক্ষয়কুমারের নাম নিয়ে কালির ছিটে ছড়ান নি। হয় তো তার অবসরও হয় নি, কারণ অক্ষয়কুমারের অধিকাংশ রচনা প্রকাশিত হ’ত “সাহিত্য” পত্রিকাতেই। সুরেশচন্দ্রকেও মাঝে মাঝে “সাহিত্য”-গোষ্ঠীভুক্ত লেখকদের সঙ্গে অক্ষয়কুমারের বাড়ীতে এসে আলাপ জমিয়ে যেতে দেখেছি। তিনি অক্ষয়কুমারের নাম দিয়েছিলেন “বড়াল-কবি”।

 অক্ষয়কুমারের মুখে নতুন বাংলার গীতি-কাব্যগুরু বিহারীলালের কোন কোন গল্প শুনেছি। ভাবে-ভোলা সদানন্দ পুরুষ, সর্বদাই কাব্যরসে মসগুল হয়ে আছেন। নতুন নতুন গান বাঁধেন, সুর দিয়ে গাইতে গাইতে দুই হাতে তক্তাপোশ চাপড়াতে চাপড়াতে তাল দেন। কিন্তু কেউ বিয়ের কবিতা ফরমাস করলেই মহা-ক্ষাপ্পা, লাঠি নিয়ে পিছনে তাড়া করেন।

 কিন্তু অক্ষয়কুমারের একটি বিশেষ দুর্বলতা প্রায়ই লক্ষ্য করেছি। যদিও এ দুর্বলতা তিনি যথাসাধ্য গোপন করবার চেষ্টা করতেন,, কিন্তু গোপন করতে পারতেন না। রবীন্দ্রনাথের উপরে তিনি মনে

১২৬