পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

বিভাগে বাংলাসাহিত্যে তিনি কেবল অতুলনীয় নয়, চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তার উপরে ছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তখনও তিনি শিল্পাচার্য হন নি— তুলি ও কলম নিয়ে খেয়ালের খেলা শুরু করেছেন মাত্র। রবীন্দ্রনাথের কবিতার সঙ্গে তাঁর আঁকা ছবি “লিথোগ্রাফ” বা শিলাক্ষরে মুদ্রিত হয়ে “সাধনা”র পৃষ্ঠাকে করত অলঙ্কৃত।

 বাল্যকালে “সাধনা” আসত আমাদের বাড়ীতে। সেই “সাধনা”র উপরে দেখতুম সম্পাদক সুধীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম। তখন জানতুম না সুধীন্দ্রনাথের সঙ্গে কোনদিন ঘনিষ্ঠ পরিচয় হবে। কিন্তু তখন থেকেই আমার কাছে তাঁর নামটি লাগত ভারি মিষ্টি। Presentiment?

 আরো বড় হয়ে সুধীন্দ্রনাথের দু-একটি রচনা পড়তুম। তারপর “সাহিত্য” পত্রিকায় দেখলুম মাথায় “ফেয্” টুপী পরা তাঁর একটি আবক্ষ প্রতিকৃতি। সুন্দর মৌখিক শ্রী—দেখলেই আকৃষ্ট হয় দৃষ্টি।

 এখনকার সাধারণ পাঠকরা বলেন্দ্রনাথকে ভুলেছেন, সুধীন্দ্রনাথকেও ভুলেছেন। য়ুরোপে জন্মালে বলেন্দ্রনাথ জনসাধারণের মধ্যেও অমর হয়ে থাকতেন, কারণ তিনি গল্পলেখক না হ’লেও তাঁর রচনাগুলি ছিল গল্পের মতই উপভোগ্য। কিন্তু সুধীন্দ্রনাথ নিজের দেশে এর মধ্যেই প্রায় অপরিচিত হয়ে উঠলেন কেন, এ রহস্য বুঝতে পারি না। প্রধানতঃ তিনি ছিলেন গল্পলেখকই এবং সত্যিকার উচ্চশ্রেণীর গল্পলেখক। তাঁর কোন কোন ছোট গল্প তখনকার সাহিত্যসমাজকে দস্তুরমত মাতিয়ে তুলেছিল— যেমন “কাসিমের মুর্গী”। তাঁর ভাষাও সেকেলে হয়ে পড়ে নি, কারণ তাঁর কলম দিয়ে বেরুতো না অলঙ্কৃত ও পল্লবিত ভাষা, তিনি ব্যবহার করতেন সহজ, সরল, চলতি ছোট ছোট শব্দ। তাঁর

১৩০