পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

আখ্যানবস্তুও ছিল ঘরোয়া। অথচ বাজারে তাঁর কেতাবের কোন ক্রেতা দেখি না। তাঁর বইগুলিও বোধ করি ছাপা নেই।

 সুধীন্দ্রনাথ হচ্ছেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৌত্র, রবীন্দ্রনাথের বড় দাদা, কবি ও দার্শনিক দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বিতীয় পুত্র। তিনি ওকালতিতে পাস করেছিলেন বটে, কিন্তু ওকালতির দিকে কোনদিনই আকৃষ্ট হন নি। আদালতও তাঁর মতন মানুষ চায় না। আদালতে তাঁর মতন মানুষ মানায় না। তাঁর বড় ছেলে শ্রীসৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম আজ সুপরিচিত।

 সুধীন্দ্রনাথ কেবল গল্প নয়, একখানি উপন্যাসও লিখেছেন, কবিতাও লিখেছেন, প্রবন্ধও লিখেছেন। প্রত্যেক কবিতায় পাওয়া যাবে তাঁর নিজস্ব ছাপ। এটিও ঠাকুরবাড়ীর একটি উল্লেখ্য বিশেষত্ব। সাহিত্য নিয়ে বা শিল্প নিয়ে আজ পর্যন্ত ওখান থেকে যাঁরা আত্মপ্রকাশ করেছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই নিজের জন্যে কেটে নিয়েছেন নূতন নূতন পথ। ররীন্দ্রনাথের বৃহত্তর ও মহত্তর প্রতিভার প্রভাবে গোটা বঙ্গসাহিত্য আচ্ছন্ন হয়ে আছে, কিন্তু তাঁর পরিবারভুক্ত কোন শিল্পীই সে প্রভাবের দ্বারা অভিভূত হন নি।

 শ্রেষ্ঠ সাহিত্যের সব লক্ষণ আছে সুধীন্দ্রনাথের রচনার মধ্যে, কিন্তু শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিকের অন্যতম যে গুণ সাহিত্যশ্রম, সেটা তাঁর মধ্যে ছিল না। ওজন করলে বেশী ভারি হবে না তাঁর গ্রন্থাবলী। কলম ধরবার উৎসাহ জাগত তাঁর কালে-ভদ্রে, কিন্তু নিয়মিতরূপে বাড়ী থেকে বেরিয়ে প’ড়ে প্রত্যহ এ-বৈঠকে ও-বৈঠকে গিয়ে ঘোরাঘুরি করবার উৎসাহ ছিল তাঁর যৎপরোনাস্তি। অথচ আসলে বৈঠকী লোক বলতে যা বুঝায়, তিনি সে প্রকৃতির মানুষ ছিলেন না। কারণ তিনি গম্ভীর না হ’লেও স্বল্পবাক ছিলেন। কথা শুনতে যত ভালোবাসতেন, কথা বলতে ততটা নয়।

১৩১