পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

কবিতা রচয়িত্রী তারাসুন্দরীর পরিচয়। এ কথা অনেকেই জানেন না যে, তারাসুন্দরী প্রথম যৌবনে কবিতা রচনা করতেন। গত যুগের আর এক বিখ্যাত অভিনেত্রী বিনোদিনীও ছিলেন কবি। এবং গদ্যেও তিনি রচনা ক’রে গিয়েছেন আত্মজীবনী।

 ১৩০২ সালে অমরেন্দ্রনাথ দত্ত “সৌরভ” নামে একখানি মাসিক কাগজ প্রকাশ করেছিলেন, তার সম্পাদক ছিলেন গিরিশচন্দ্র ঘোষ। “সৌরভে” বিনোদিনী ও তারাসুন্দরীর দুটি কবিতা প্রকাশ করবার সময়ে গিরিশচন্দ্র লিখেছিলেন: ‘অভিনেতৃবর্গ আমার চক্ষে আমার পুত্র-কন্যার মত সন্দেহ নাই। তাহাদের গুণগ্রাম অপ্রকাশিত থাকে, আমার ইচ্ছা নয়। সেই উদ্দেশ্যে নিম্নলিখিত কবিতা দুইটি পত্রিকায় প্রকাশ করিলাম।’

 “সৌরভে”র দুই সংখ্যায় তারাসুন্দরীর দুটি কবিতা প্রকাশিত হয়— “প্রবাহের রূপান্তর” এবং “কুসুম ও ভ্রমর”। কবিতা দুটি আমি পড়েছি। পঞ্চান্নো বৎসর আগেকার দিনে অধিকাংশ সুপরিচিত কবিও তার চেয়ে ভলো কবিতা রচনা করতে পারতেন না। “সৌরভ” দীর্ঘজীবী হ’লে তারাসুন্দরীর কাব্যসাধনা অধিকতর অগ্রসর হবার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয়, তার পরমায়ু হয়েছিল মাত্র তিন মাস।

 কাব্যরস বা সাহিত্যরসের অনুশীলন করবার শক্তি না থাকলে কোন অভিনেতাই উচ্চশ্রেণীতে উন্নীত হ’তে পারেন না। গুরুদত্ত শিক্ষা তোতাপাখীর মত আউড়ে আউড়ে অভিনেতা বড় জোর চলনসই ব’লে গণ্য হ’তে পারেন, কিন্তু তার বেশী আর কিছুই নয়। কার্লাইল বলেছেন: যিনি কাব্য রচনা করেন তিনিই কেবল কবি নন, যিনি কাব্য পাঠ করেন তাঁকেও হ’তে হবে কবি। তেমনি রঙ্গমঞ্চের উপরে কাব্যকে ফুটিয়ে তোলাই যাঁদের প্রধান কর্তব্য,

১৩৭