পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

সাধারণতঃ তিনি গম্ভীর রসের ভারি ভারি ভূমিকায় অভিনয় ক’রেই তুলনাহীন নাম কিনেছিলেন। ওদিকে নৃত্যে ও ‘লো-কমেডি’তে নৃপেন্দ্রচন্দ্রেরও পসার ছিল প্রচুর। কিন্তু উচ্চতর শ্রেণীর অভিনয়ের দ্বারা উৎপলের মত নিম্নশ্রেণীর ভূমিকাও কতখানি অসাধারণ ক’রে তোলা যায়, তারাসুন্দরী সেটা সকলের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন। গানের সময়ে যে অপূর্ব মৌখিক ভাবাভিব্যক্তি দেখালেন, বাংলা রঙ্গালয়ে তার তুলনা আর পাই নি। নিষ্প্রভ হয়ে গেল নৃপেন্দ্রচন্দ্রের “উৎপল”। লোকের বিস্ময়ের অবধি নেই। আবার নতুন ক’রে দ্বিগুণ জ’মে উঠল “কিন্নরী”।

 বড় নটী ব’লে বিনোদিনীর খুব নাম শুনি। বৃদ্ধা বিনোদিনীর সঙ্গে পরিচয় হয়েছে কিন্তু তাঁর অভিনয় আমি কখনো চোখে দেখি নি। তবে গত অর্ধশতাব্দীর মধ্যে গম্ভীর রসের ভূমিকায় যত অভিনেত্রীকে দেখেছি, তারাসুন্দরীর স্থান নির্দেশ করতে পারি তাঁদের সকলেরই উপরে। শিল্পী হিসাবে দানীবাবুও তাঁর সমকক্ষ ছিলেন না। তাঁর কণ্ঠস্বর ছিল চমৎকার ও উচ্চারণ ছিল অতি স্পষ্ট, নটের প্রধান যে গুণদুটির উপরে দানীবাবুর দাবি নেই। দানীবাবুর অভিনয় হ’ত একান্তভাবেই ‘মেলো-ড্রামাটিক’, কিন্তু কি ‘মেলোড্রামা’য় আর কি বাস্তব নাটকে তারাসুন্দরী সমান দক্ষতার সঙ্গে অভিনয় করতে পারতেন। দানীবাবুর আর্টের মধ্যে পাওয়া যেত একটা আন্তরিকতা ও জন্ম-অভিনেতার স্বভাবসিদ্ধ দক্ষতার পরিচয় এবং তারাসুন্দরীর আর্টের মধ্যে আমরা লাভ করতুম আন্তরিকতার সঙ্গে সুচিন্তিত পরিকল্পনা ও ক্রিয়াশীল মনীষার প্রভাব।

 গিরিশচন্দ্র ও অর্ধেন্দুশেখর প্রভৃতির মত প্রথম শ্রেণীর নাট্যাচার্যের কাছে মানুষ হয়ে তারাসুন্দরীর অভিনয়-শিক্ষার বনিয়াদ রীতিমত পাকা হয়ে উঠেছিল। কিন্তু প্রথমে অর্ধেন্দুশেখর এবং

১৩৯