পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

 আমি বললুম, ‘কিন্তু এখানে সাপ আছে।’

 দীনেশচন্দ্র বললেন, ‘তা আছে। কিন্তু বেহালার সাপরা মানুষদের কামড়ায় না।’

 প্রেমাঙ্কুর বললেন, ‘বেহালার সাপরা বৈষ্ণব হ’তে পারে, কিন্তু এখানে ভারি শীত, আমি শীতকে ভয় করি।’

 দীনেশচন্দ্র বললেন, ‘আপনি ঠাণ্ডাকে নিশ্চয় আমার চেয়ে ভয় করেন না। পাছে ঠাণ্ডা লাগে সেই ভয়ে স্নান করা আমি প্রায় ছেড়েই দিয়েছি। একদিন কি হয়েছিল জানেন? আমার এক ছেলে ডুবে গেল ঐ পুকুরে। কিন্তু আমি সাঁতার জেনেও ঠাণ্ডার ভয়ে পুকুরের জলে নামতে পারলুম না, ডাঙায় দাড়িয়েই চেঁচিয়ে পাড়া জাগিয়ে তুললুম। তারপর সকলে ছুটে এসে ছেলেকে জল থেকে টেনে তুললে।’

 কিছুকাল পরেই খবর পেলুম, দীনেশচন্দ্র বেহালা থেকে পৃষ্ঠভঙ্গ দিয়ে আবার কাঁটা পুকুরের বাড়ীতে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। কারণ? ম্যালেরিয়ার আক্রমণ।

 প্রথম দর্শনেই দীনেশচন্দ্রকে যেমন নিকট-আত্মীয় ব’লে মনে হয়েছিল, তারপরও বরাবর তাই ব’লেই মনে হয়েছে। তিনি যেখানেই বসতেন, সৃষ্ট হ’ত যেন একটি প্রেমের আবহ। সদানন্দ মাটির মানুষ ছিলেন তিনি। উত্তেজিত হয়ে তাঁর সঙ্গে তর্ক করেছি, দু’চারটে কঠিন কথাও বলেছি, কিন্তু তাঁর মুখের হাসি তখনও মিলোয় নি। হয়তো সেইদিনই তাঁর বাড়ীতে আহারের নিমন্ত্রণ ক’রে গিয়েছেন। বহু পরশ্রীকাতর ব্যক্তি পত্রিকায় তাঁকে কটু ভাষায় আক্রমণ করেছে, কিন্তু তিনি কখনো কাগজে-কলমে তার উত্তর দেন নি, নীরবে নির্বিকারচিত্তে নিজের সাহিত্যসাধনা নিয়েই নিযুক্ত হয়ে থাকতেন।

১৪৮