পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

একুশ

 সেকালের এক ভারতীয় রাজার নাম ছিল অজাতশত্রু। এমন নামের মানে হয় না। কারণ তখন প্রতিবেশী রাজাদের রাজ্য আক্রমণ ক’রে নিজের রাজ্যের আয়তন বৃদ্ধি করাই ছিল রাজধর্ম। সুতরাং শত্রু ছিল প্রত্যেক রাজারই।

 কিন্তু সাহিত্যজগতে আমি এমন একাধিক ব্যক্তিকে দেখেছি, সত্যসত্যই যাঁদের উপাধি হ’তে পারে ‘অজাতশত্রু’। যেমন সুধীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যেমন জলধর সেন

 জলধর সেন ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমবয়সী। উভয়েরই জন্ম ১২৬৮ বঙ্গাব্দে। সুতরাং বয়সে তিনি অধিকাংশ আধুনিক সাহিত্যিকেরই পিতা বা পিতামহের মত ছিলেন। কিন্তু কারুর কাছ থেকেই তিনি সে-রকম মর্যাদা লাভ করতে চাইতেন না। বয়সে ছেলে বা নাতির মত ব’লে কেউ যে তাঁকে সমীহ ক’রে তফাতে তফাতে থাকে, এটা তিনি মোটেই পছন্দ করতেন না। প্রায় সমবয়স্কের মত সকলের সঙ্গে মেলামেশা করাই ছিল তাঁর স্বভাব। বয়সে যত ছোটই হোক্, সকলকেই আদর ক’রে পাশে টেনে নিতেন, ‘ভাই’ ব’লে ডাকতেন, মিষ্ট কথা বলতেন। এজন্যে তিনি হয়ে পড়েছিলেন ‘সরকারি দাদা’। পিতারাও তাঁকে ‘জলধরদাদা’ ব’লে ডাকতেন এবং তাঁদের ছেলেদেরও কাছে তিনি ছিলেন ‘জলধরদা’। বলা বাহুল্য তিনি ছিলেন আমারও ‘দাদা’।

 পত্নীবিয়োগের পর অনেকেরই মনে যৌবনেই বৈরাগ্যের উদয় হয়। তার ফলে সাহিত্য লাভবান হয় মাঝে মাঝে। রবীন্দ্রনাথের

১৫৭