পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

বক্তৃতা দিতে উঠে বললেন, ‘সত্যেন্দ্রনাথ আজ পরলোকে। কিন্তু আমার মনে হয়, হেমেন্দ্রকুমারের কবিতার ভিতর দিয়ে আবার তিনি আত্মপ্রকাশ করছেন’ প্রভৃতি। আমি তো লজ্জাসঙ্কোচে মাথা হেঁট করলুম। অবনীন্দ্রনাথ চুপিচুপি আমার কানে কানে বললেন, ‘ও হেমেন্দ্র! জলধরবাবু বলেন কি হে? সত্যেন্দ্রনাথের প্রেতাত্মা নাকি তোমার উপরে ভর করেছে? দেখো, খুব, সাবধান!’

 একদিন জলধরবাবুর বাড়ীতে ঢুকেই দেখি, বৈঠকখানায় তিনি ব’সে আছেন একলাটি। আমার হাতে সিগারেট ছিল, ফেলে দিয়ে ঘরের ভিতরে ঢুকলুম। সেটা তিনি লক্ষ্য করলেন। বললেন, ‘ভায়া, আমার মত বার্মা চুরুট ধর না কেন?’

 বললুম, ‘দাদা, ওর কালো রং আর কড়া আকার দেখলে ভয় হয়। টান দিয়ে হয়তো সামলাতে পারব না।’

 তিনি বললেন, ‘না হে, না। তোমার ভয় অমূলক। বার্মা চুরুটের ধোঁয়া সিগারেটের চেয়ে মিষ্টি আর নরম। এই নাও, আমার সামনেই পরীক্ষা ক’রে দেখ।’ ব’লেই আমার হাতে গুঁজে দিলেন একটা চুরুট।

 বিলাতের চার্চিল সায়েব নাকি চুরুটের প্রেমে মশগুল; জলধরবাবুও ছিলেন তাই। সর্বদাই চুরুটের সঙ্গে সঙ্গে তিনি হ’তেন দৃশ্যমান। আজও চুরুট দেখলে তাঁর কথাই আমার মনে পড়ে এবং তাঁর কথা ভাবলে মনে পড়ে চুরুটের কথা।

 জলধরবাবুর এক ছেলের বিয়ে। আমার সাহিত্যিক বন্ধুরা নিমন্ত্রিত হয়েছেন, কিন্তু আমি হই নি। নিমন্ত্রণের জন্যে কোনদিনই আমি লুব্ধ নই, বহু ঘনিষ্ঠ বন্ধুর নিমন্ত্রণ রক্ষা না ক’রে বারংবার তিরস্কৃত হয়েছি। কিন্তু সে দিন আমার মাথায় জাগল দুষ্টবুদ্ধি।

১৬২