পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

সুবিখ্যাত হয়েছেন। একদিন শুনলুম নজরুল ইসলাম জমীরের কাছে গান শিখছেন। নজরুল যে গায়ক হবার জন্যে তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন নি, এ কথা তখন তিনি বুঝতে পারেন নি, কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছিলুম।

 অনেক দিন পরে গ্রামোফোন কোম্পানীর কার্যালয়ে জমীরুদ্দীনের সঙ্গে দেখা। তখন আমি গান রচনার দিকে ঝোঁক দিয়েছি খুব বেশী মাত্রায়। আমার কলমে এসেছিল গানের বন্যা, প্রত্যহই গান রচনা করি। গ্রামোফোনের রেকর্ডে প্রায়ই আমার গান প্রকাশিত হ’ত এবং জমীরুদ্দীন ছিলেন ওখানকার অন্যতম সঙ্গীত-শিক্ষক। আমাকে দেখেই ভারি খুসি। হাসিমুখে বললেন, ‘দাদা, আপনার কথাই ভাবছিলুম।’ আমি বললুম, ‘সে কি হে, চোরে-কামারে দেখা নেই, আমার কথা ভাবছিলে মানে?’ জমীর বললেন, ‘উর্দু গানের সুরে আমাকে খানকয় বাংলা গান বেঁধে দিতে পারবেন?’ আমি বললুম, ‘তা পারব না কেন? কিন্তু উর্দু গানগুলি না শুনলে তো সেই চালে গান লিখতে পারব না।’ তিনি বললেন, ‘বেশ, কালকেই আপনাকে গান শুনিয়ে আসব।’

 কথাপ্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলুম, ‘নজরুল এখনো তোমার কাছে গান শেখে কি?’

 প্রবল মস্তকান্দোলন ক’রে জমীর বললেন, ‘না। নজরুলকে আমি আর কখনো গান শেখাব না।’

 জিজ্ঞাসা করলুম, ‘হয়েছে কি, এত চটেছ কেন?’

 তিনি বললেন, ‘দাদা, না চটে কি থাকা যায়? নজরুল আমার কাছ থেকে গানের পর গান শিখতে লাগল। তারপর সে কি করলে জানেন? বাংলা গানে সেই সব গানের সুর বসিয়ে এখানেই এসে শিখিয়ে যেতে লাগল। বলুন, এর পরেও কি তাকে আর

১৬৮