পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

 তাঁর কথার অর্থ বুঝলুম। তিনি চান সুরাদেবীর প্রসাদ।

 আমি হাসতে হাসতে বললুম, ‘বেশ, তাই হবে।’

 তারপর থেকে আমার বাড়ীতে হ’তে লাগল জমীরুদ্দীনের ঘন ঘন আবির্ভাব। এক-একদিন কোন খবর না দিয়েই তিনি এসে পড়তেন এবং সেদিন নিজেই কোন ভালো তবলচীকে সঙ্গে ক’রে নিয়ে আসতেন। আসর বসত সন্ধ্যার সময়ে এবং রাত দুটো কি তিনটের আগে সে আসর আর ভাঙত না। কোন কোন দিন অন্যান্য গায়করাও থাকতেন এবং শ্রোতার সংখ্যাও বড় কম হ’ত না। আবার এক-একদিন শ্রোতা হতুম আমি একলাই, কিন্তু তবু জমীরের উৎসাহের অভাব হ’ত না কিছুমাত্র। জ্যোৎস্নাপুলকিত গঙ্গার কলকল্লোলের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে তিনি স্তব্ধ নিশীথের বুকের ভিতরে ঢেলে দিতেন গানের পর গানের ধারা। যত রাত বাড়ে, তত বাড়ে সুরার মাত্রা এবং তত বাড়ে তাঁর গাইবার উৎসাহ। কিন্তু এ উৎসাহ মদ্যপের উৎসাহ নয়, এ হচ্ছে শিল্পীর উৎসাহ। নিজেই তিনি ডুবে যেতেন যেন গীতরসধারার মধ্যে। প্রচুর মদ্য পান করেছেন, পা টলছে, তবু কোনদিন কিছু বেচাল দেখি নি, কোনদিন তাল কাটে নি, গলা বেসুরো বলে নি।

 কিন্তু যে কোন শিল্পীর পক্ষেই মদ্য হচ্ছে দারুণ অভিশাপের মত। বিশেষতঃ কণ্ঠসঙ্গীত নিয়ে যাঁদের কারবার, তাঁদের তো মদ স্পর্শ করাই উচিত নয়। জমীরুদ্দীনের যথেষ্ট সঙ্গীত-প্রতিভা ছিল বটে, কিন্তু সুরার বিষ নিশ্চয়ই তাঁর দেহের ভিতরটা জীর্ণ ক’রে দিচ্ছিল ধীরে ধীরে।

 একদিন দুপুর বেলায় তিনতালার বারান্দার প্রান্তে ব’সে রচনাকার্যে নিযুক্ত আছি, হঠাৎ একতালা থেকে জমীরের গলার সাড়া পেলুম, ‘দাদা, দাদা!’

১৭০