আমি তাঁকে উপরে আসতে বললুম। তিনি উপরে এলেন, কিন্তু কি মূর্তি! অস্নাত চেহারা, চক্ষু স্ফীত, প্রায় দাঁড়াতে পারেন না, এমন অবস্থা।
বিস্মিত হয়ে বললুম, ‘ব্যাপার কি জমীর?’
তিনি ধপাস্ ক’রে ব’সে পড়ে বললেন, ‘কাল রাতে একটা বড় মাইফেল ছিল, আমার মাত্রা বড় বেশী হয়ে গেল। তারপর সকাল থেকে খাচ্ছি, এখন আপনার এখানে আবার খেতে এসেছি।’
আমি বললুম, ‘মাপ কর ভাই জমীর, তা হয় না। দেখছ তো আমি লিখছি, তোমাকে নিয়ে আমি এখন ব্যস্ত হ’তে পারব না।’
বাড়ীর সামনেকার গঙ্গার দিকে উদাস চোখে তাকিয়ে জমীর চুপ ক’রে ব’সে রইলেন খানিকক্ষণ। তার পর উঠে দাঁড়িয়ে টলতে টলতে চ’লে গেলেন।
ভেবেছিলুম জমীর রাগ ক’রে আর আমার বাড়ীতে আসবেন না। কিন্তু আমার সে ধারণা ভুল। হপ্তা দুই পরে আবার তাঁর আবির্ভাব। ওষ্ঠাধরে মিষ্ট হাসি, দুই চোখে প্রীতির ভাব।
তাঁর সঙ্গে শেষ দেখার কথা বলি। সেদিন “অল-ইণ্ডিয়া-রেডিও”য় একটি গল্প পাঠ ক’রে রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছি। সন্ধ্যাকাল। হঠাৎ পিছন থেকে কে আমাকে দুই হাতে সজোরে জড়িয়ে ধরলে— আমি চমকে দেখতে পেলুম কেবল একটা প্রকাণ্ড পাগড়ী। এই অভাবিত ও আকস্মিক আলিঙ্গন থেকে কোন রকমে নিজকে মুক্ত ক’রে নিয়ে ফিরে দেখি, জমীরুদ্দীন!
তিনি হাসতে হাসতে বললেন, ‘কি দাদা, ভয় পেলেন নাকি?’
বললুম, ‘তা একটু পেয়েছিলুম বৈকি! ভেবেছিলুম গুণ্ডার হাতে পড়েছি!’
১৭১