পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

ইংরেজের ভূমিকায় রাধিকানন্দের যে চমৎকার অভিনয় দেখেছিলুম, তার ছবি এখনো আমার মন থেকে মুছে যায় নি। অমৃতলাল বসুও ঐ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন, কিন্তু তিনিও রাধিকানন্দের কাছ পর্যন্ত পৌঁছতে পারেন নি।

 সাধারণ আবৃত্তির শক্তিও তাঁর অল্প ছিল না। বাংলায় রবীন্দ্রনাথের “পুরাতন ভৃত্য” ও ইংরেজীতে টেনিসনের “দি চার্জ অফ দি লাইট ব্রিগেডে”র আবৃত্তি তাঁর মুখে শ্রবণ ক’রে মুগ্ধ হন নি এমন লোক নেই। এম্পায়ার থিয়েটারে রবীন্দ্রনাথের “চিত্রাঙ্গদা” খুলে অর্জুনের ভূমিকার অপূর্ব অভিনয় ক’রে তিনি প্রমাণিত করছিলেন যে, গদ্যের মত পদ্যেও কাব্যমাধুর্য যথাযথভাবে অভিব্যক্ত করবার ক্ষমতা ছিল তাঁর কত বেশী। সেই নাট্যাভিনয়ে তিনি উচ্চশ্রেণীর প্রয়োগনৈপুণ্যেরও পরিচয় দিয়েছিলেন।

 কিন্তু নির্মলেন্দুর মত রাধিকানন্দও বৈতনিক অভিনেতার কাজে নিযুক্ত থেকে নিজের পরিপূর্ণ শক্তির সদ্ব্যবহার ক’রে যেতে পারেন নি। একটি নিজস্ব সম্প্রদায় গঠন ক’রে নাট্যাচার্যের কর্তব্য পালন করবার মত প্রতিভাও তাঁর ছিল। তবে সে শক্তির অল্পবিস্তর পরিচয় দিয়ে গিয়েছেন তিনি শ্রীযুক্ত জ্যোতি বাচস্পতি প্রণীত “নিবেদিতা” নাটকখানি খুলে। গান রচনার, সুর সংযোজনার ও নৃত্য-পরিকল্পনার ভার আমার উপরে দিয়ে তিনি আর সব ভারই নিজের হাতে তুলে নিলেন। সম্প্রদায়ের অধিকাংশ নট-নটীই একেবারে কচি ও কাঁচা। তারা যে কতটা মুখ রক্ষা করতে পারবে, সে সম্বন্ধে আমার অল্প সন্দেহ ছিল না। কিন্তু রাধিকানন্দ সকলকে এমন অভাবিত ভাবে গ’ড়ে-পিটে ‘মানুষ’ ক’রে তুলতে লাগলেন যে, তাঁর নাট্যশিক্ষা দেবার ক্ষমতা দেখে আমি বিস্মিত

১৭৮