পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

আরো কেউ কেউ, শেষ পর্যন্ত শরৎচন্দ্রকে কোণঠাসা হয়ে মৌনব্রত অবলম্বন করতে হ’ত। তর্কের উত্তাপে আমরা সময়ে সময়ে অসংলগ্ন অপ্রিয় কথাও ব’লে ফেলেছি, কিন্তু কোনদিন তিনি মুখভার করেন নি, বরাবরই ক্ষমা করেছেন।

 পূর্বে যে লেড়ী কুকুরের বাচ্চার কথা বলেছি, শরৎচন্দ্র তার নাম রেখেছিলেন “ভেলু”। তার সব চেয়ে বড় সখ ছিল, যে কোন মানুষকে আদর ক’রে কামড়ে দেওয়া। তার এই বিপদজনক সখের জন্যে শরৎচন্দ্রের নামে আদালতে নালিশ হয়েছে, তবু ভেলুর বিরুদ্ধে তাঁর কোন অভিযোগ ছিল না। একদিন সে তার মনিবেরই করতল কামড়ে এ-ফোঁড় ও-ফোঁড় ক’রে দিয়েছিল। পরদিন ব্যাণ্ডেজ-বাঁধা হাত নিয়ে শরৎচন্দ্র এসে বললেন, ‘আহা, আমাকে কামড়ে দিয়ে ভেলুর যে কি দুঃখ আর লজ্জা হয়েছিল, তার চোখ-মুখ দেখলেই তোমরা বেশ বুঝতে পারতে!’ এই ভেলু ঘরে ঢুকলেই সুধীর সরকার হন্তদন্ত হয়ে প্রাণপণে একটি লাফ মেরে একেবারে টেবিলের উপরে আরোহণ করতেন এবং সেই সারমেয়নন্দনকে সেখান থেকে অপসারিত না করা পর্যন্ত তিনি আর ভূমিষ্ঠ হবার নাম মুখেও আনতেন না।

 ভেলুর জন্যে হোটেল থেকে আসত ঘিয়ে ভাজা মটন চপ ও কাটলেট প্রভৃতি। প্রেমাঙ্কুর একদিন শরৎচন্দ্রের অসাক্ষাতে অভিযোগ করলেন, ‘শরৎবাবুর ব্যবহারটা দেখ একবার! একটা লেড়ী কুকুরের জন্যে আসছে ভালো ভালো খাবার, আর আমরা এতগুলো ভদ্রলোক যে এখানে উপস্থিত আছি, সেটা ওঁর খেয়ালেই আসে না!’

 কেবল ভেলুর উপরেই শরৎচন্দ্রের পক্ষপাতিত্ব ছিল না, তিনি ভালোবাসতেন কুকুর জাতটাকেই। তাঁর মোটর-চালকের উপরে

১৯০