পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

গঙ্গাগর্ভ থেকে উদ্ধার করবার আর কোন উপায়ই ছিল না।

 শরৎচন্দ্র পানিত্রাশের পল্লীভবনে যাবার পর বহুকাল তাঁর দেখা পাই নি। ইতিমধ্যে আমিও গঙ্গার ধারে আমার নূতন বাড়ীতে চ’লে এসেছি। একদিন দুপুরবেলায় বারান্দায় ব’সে লিখছি কি পড়ছি মনে নেই, হঠাৎ শুনতে পেলুম একতালায় সিঁড়ির কাছে কে পরিচিত কণ্ঠস্বরে আমার মেয়েদের সঙ্গে কথা কইছেন। বলছেন, ‘ওগো বাছারা, তোমরা যখন জন্মাওনি, তোমাদের বাবা তখন থেকেই আমার বন্ধু।’ গাত্রোখান ক’রে মুখ বাড়িয়ে দেখি সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে আসছেন শরৎচন্দ্র ও স্বর্গীয় কবি গিরিজাকুমার বসু

 এই অপ্রত্যাশিত আবির্ভাবে আমি অত্যন্ত বিস্মিত। উপরে এসে শরৎচন্দ্র বললেন, ‘গিরিজার সঙ্গে বরানগরের বাগানে যাচ্ছিলুম রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করতে। হঠাৎ তোমার কথা মনে পড়াতে এখানে চ’লে এসেছি।’

 তাঁকে ঘরের ভিতরে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে বললুম, ‘কোথায় রবীন্দ্রনাথ আর কোথায় আমি! চাঁদের বদলে পাবেন আপনি জোনাকীকে। সিগারেট নিন।’

 —‘না, সিগারেট আর ভালো লাগে না। তামাক আছে?’

 —‘না দাদা। তবে হুইস্কি আছে।’

 —‘না, তাও খাব না।’

 —‘তবে কি খাবেন?’

 —‘গল্প। খালি গল্প করব।’

 তাই হ’ল। ঘণ্টাকয় ধ’রে চলল কেবল গল্প আর গল্প— পুরানো দিনের গল্প, আধুনিক সাহিত্য ও সাহিত্যিকদের গল্প, পরিচিত বন্ধুবান্ধবদের গল্প। দেখলুম পুরাতন শরৎচন্দ্র

১৯২