পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

হ’লেও রচনাভঙ্গীর উপরে বঙ্কিমচন্দ্রের বা রবীন্দ্রনাথের সুস্পষ্ট প্রভাব বিদ্যমান এবং কতকগুলি লেখা এমনিই অকিঞ্চিৎকর যে, প্রকাশ ক’রে লেখককে অপমান ছাড়া আর কিছুই করা হয় নি।

 আত্মশক্তির উপরে শরৎচন্দ্রের একটা অন্ধ নির্ভরতা ছিল এবং সময়ে সময়ে সেটা তিনি যুক্তিহীন শিশুর মতই সরলভাবে প্রকাশ ক’রে ফেলতেন। একদিনের কথা বলি। “যমুনা” তখন উঠে গেছে এবং সেই ঘরেই বসে সাপ্তাহিক সাহিত্য-পত্রিকা “মর্মবাণী”র আসর। শরৎচন্দ্র তখন পূর্ণচন্দ্রের মত সম্পূর্ণরূপেই সমুদিত।

 আমরা কয় বন্ধু মিলে ব’সে ব’সে গল্প করছি। রবীন্দ্রনাথের “ঘরে-বাইরে” তখন “সবুজপত্রে” ক্রমে ক্রমে প্রকাশিত হচ্ছে এবং তার বিরুদ্ধে আরম্ভ হয়েছে ঘোরতর আন্দোলন। প্রসঙ্গক্রমে “ঘরে-বাইরে”র কথা উঠল। শরৎচন্দ্র বললেন, ‘রবিবাবু “সবুজপত্রে” “ঘরে-বাইরে” লিখছেন। এবারে “ভারতবর্ষে” আমার যে উপন্যাস বেরুবে, তোমরা নিক্তি ধ’রে দেখে নিও, তার ওজন “ঘরে-বাইরে”র চেয়ে এক তিল কম হবে না।’

 আমি জিজ্ঞাসা করলুম, ‘আপনার লেখা শেষ হয়ে গেছে?’

 তিনি বললেন, ‘না, এখনো লেখা আরম্ভই হয় নি।’

 আমরা পরস্পরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলুম। কিন্তু সেখানে ছিলেন শ্রীপ্রভাতচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়। কারুর যুক্তিহীন কথাই তিনি চুপ ক’রে শোনবার ছেলে নন। বললেন, ‘রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস এখনো শেষ হয় নি, আর আপনার উপন্যাস এখনো লেখাই হয় নি! যা এখনো লেখেন নি, তার সঙ্গে কি ক’রে “ঘরে-বাইরে”র তুলনা করছেন?’

 তবু শরৎচন্দ্র বললেন, ‘দেখে নিও।’

 যতদূর মনে পড়ে, শরৎচন্দ্রের পরবর্তী উপন্যাসের নাম

১৯৭