পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

গৃহদাহ”, তার একটি চরিত্রের উপরে রবীন্দ্রনাথের অন্য একখানি উপন্যাসের একটি বিখ্যাত চরিত্রের স্পষ্ট ছায়া আছে।

 এই উপন্যাস সম্বন্ধেই কি একখানি পত্রে শরৎচন্দ্র এই কথাগুলি লিখেছিলেন? ‘এ গল্পটা ‘গোরার’ (রবীন্দ্রনাথের) ‘পরেশবাবুর’ ভাব নেওয়া। অর্থাৎ নিজেদের কাছে বলতে ‘অনুকরণ’। তবে ধরবার যো নেই। আমার সন্দেহ সত্য হ’লে বলতে হবে, উপন্যাস লিখতে আরম্ভ ক’রে শরৎচন্দ্র নিজেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, তিনি “ঘরে-বাইরে”র সমকক্ষ কোন কিছু রচনা করছেন না। আর সত্য কথা বলতে কি, “গৃহদাহ” কেবল “ঘরে-বাইরে”র সঙ্গে তুলনীয় তো নয়ই, উপন্যাসখানি শরৎচন্দ্রের কথা-সাহিত্যের মধ্যেও উচ্চ স্থান অধিকার ক’রে নেই।

 গোড়া থেকেই দেখে এসেছি, শরৎচন্দ্রের মধ্যে ছিল না কোন রকম ‘পোজ’ বা ঢং। যখন সর্বত্রই বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান ঔপন্যাসিকরূপে স্বীকৃত ও সমাদৃত হয়েছেন, তখনও তিনি নিজেকে অভিজাত বা হোমরাচোমরাদের একজন ব’লে পরিচিত করবার কোন চেষ্টাই করতেন না। এবং কতদিনই তাঁর মুখে এই সব কথা শুনেছি—‘ইন্‌টেলেক্‌চুয়াল গল্প কাকে বলে হেমেন্দ্র? ও বস্তুটি তো আমি জানি না! অভিজাত সাহিত্যিক বলে কাদের? যাঁরা লোককে ধাপ্পা দিয়ে, ধাক্কা মেরে চমকে দেন? আমি বাপু, বেশী লেখাপড়াও করি নি, আমার জ্ঞানও খুব বেশী নয়। তবু যে লোকে আমার লেখা পড়তে চায়, তার কারণ হচ্ছে আমি নিজের চোখে যা দেখি, আর নিজের মনে যা অনুভব করি, লেখার ভিতর দিয়ে কেবল সেইটুকু প্রকাশ করতে চাই।’

 কিন্তু শরৎচন্দ্রের লেখার সঙ্গে মুখের কথা মিলত না মাঝে

১৯৮