পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/২০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

যখন বাঙালী লেখকদের মধ্যে ফাউনটেন পেনের বিশেষ চলন হয় নি, তখনও তিনি ফাউনটেন পেন ছাড়া আর কোনরকম কলম নিয়ে কাজ করতেন না। তাঁর লেখার ছাঁদ ছিল ছোট ছোট, কিন্তু বড় সুন্দর। ঠিক যেন মুক্তার সারি।

 নানা সাহিত্য-বৈঠকে ও অন্যান্য স্থানে শরৎচন্দ্রের সঙ্গে দেখা হয়েছে যে কতবার, তা গণনা ক’রে বলা অসম্ভব। আমার বাড়ীতে দয়া ক’রে বার বার তিনি এসেছেনও। কিন্তু শিবপুরে বা পানিত্রাশে তাঁর কোন বাড়ীতে কোন দিনই আমার যাওয়া হয়ে ওঠে নি। তাঁর বালীগঞ্জের বাড়ীতেও আমি গিয়েছিলুম একবার মাত্র। আমি তখন কোন্ পত্রিকার সম্পাদক, ঠিক স্মরণ হচ্ছে না। একটি রচনা ভিক্ষা করবার জন্যে একদিন শরৎচন্দ্রের বাড়ীতে গিয়ে ধর্না দিলুম। আমার সঙ্গে ছিলেন শ্রীপশুপতি চট্টোপাধ্যায়, তিনি আগে ছিলেন উদীয়মান সাহিত্যিক, এখন হয়েছেন চলচ্চিত্র-পরিচালক।

 শরৎচন্দ্র আমাদের দেখে খুসি হলেন, দু’জনকে নিয়ে গিয়ে বসলেন একতলার একখানি প্রশস্ত ঘরে। অল্পক্ষণ কথাবার্তার পর আমাদের আগমনের কারণ বললুম।

 তিনি দুঃখিতভাবে বললেন, ‘আমি আর লেখা দিতে পারব না, আমি আর লিখতে পারি না। মাথায় বিষম যন্ত্রণা, কলম ধরা অসম্ভব।’

 আমি আর পীড়াপীড়ি করলুম না, ওটা আমার স্বভাববিরুদ্ধ। অন্য কথা পাড়লুম।

 খানিকক্ষণ গল্প করবার পর শরৎচন্দ্র উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘চল হেমেন্দ্র, তোমাকে আমার বাড়ীর ভিতরটা দেখিয়ে আনি।’

 আমাকে নিয়ে শরৎচন্দ্র তাঁর বাড়ীর একতলার ও দোতলার

২০০