পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/২০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

কয়েকখানি ঘর দেখালেন। তাঁর লেখবার ঘরটিও দেখলুম। ছোট ঘর। বিশেষ কোন আসবাব বা সাজসজ্জা নেই। ছোট একটি টেবিলের উপরে বৈদ্যুতিক আলোদান এবং এলোমেলোভাবে ছড়ানো এটা ওটা সেটা। একদিকে একটি ছোট পুস্তকাধার, তার তাকে সাজানো কতকগুলি ইংরেজী পুস্তক। সাহিত্যিকের ঘর ব’লে মনে হ’ল না।

 শরৎচন্দ্র বললেন, ‘কত লোকই দেখা করতে আসেন, কিন্তু তুমি আসো না কেন? তোমার মত পুরানো বন্ধুর মুখ দেখলে আমার মনে আনন্দ হয়।’

 বললুম, ‘এই তো আজ এসেছি দাদা!’

 —‘হ্যাঁ, দায়ে প’ড়ে।’

 হেসে বললুম, ‘কিন্তু সে দায় থেকেও তো আপনি আমাকে উদ্ধার করলেন না!’

 করুণ চোখে আমার দিকে চেয়ে শরৎচন্দ্র বললেন, ‘বিশ্বাস কর হেমেন্দ্র, আমি আর লিখতে পারি না। তুমি আমার শরীরের অবস্থা জানো না, লেখা আমার আসে না।’ তাঁর কণ্ঠস্বরে কাতরতা।

 সেদিনও আমি সন্দেহ করতে পারি নি, মৃত্যু তাঁর কত কাছে এগিয়ে এসেছে! তারপর সত্য সত্যই তিনি আর কোন নূতন রচনায় হাত দেন নি।

 তার কিছুদিন পরে বেতার প্রতিষ্ঠানে শরৎচন্দ্রের জন্মদিনে একটি অনুষ্ঠান হয়। সেখানে নাটোরের মহারাজা প্রমুখ বহু গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। বক্তার পর বক্তা উঠে চিরাচরিত নিয়মে শরৎচন্দ্রের সুদীর্ঘ জীবন কামনা করে দু’-চার কথা বললেন। ভালো লাগল না।

২০১