পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

নাবালকের আবির্ভাব কিভাবে গ্রহণ করবেন, তাই ভাবতে ভাবতে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে লাগলুম।

 লম্বা একখানি হলঘর। দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকেই দেখা যায়, আলমারিতে সাজানো রয়েছে সারি সারি বই। পশ্চিমদিকে কাঠের ‘পার্টিশান।’ তারই কাছে চাদর-পাতা তোষকের উপরে তাকিয়া ঠেস দিয়ে ব’সে আছেন গিরিশচন্দ্র; ভাবুক, গম্ভীর মূর্তি— আদুড় গা। প্রশান্ত দৃষ্টি তুলে একবার আমার দিকে তাকালেন। নমস্কার করলুম। প্রতি-নমস্কার ক’রে ঘাড় নেড়ে আমাকে বসবার জন্যে ইঙ্গিত করলেন।

 মেঝেয় পাতা ছিল গালিচা কি সতরঞ্জী মনে নেই, তারই উপরে ব’সে পড়লুম।

 চোখের সামনে দেখলুম যেন এক সিদ্ধ সাধকের অপূর্ব মূর্তি। তাঁর প্রথম ও মধ্য জীবনের অনেক উদ্দামতার ও উচ্ছৃঙ্খলতার কাহিনী শুনেছিলুম। তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন: ‘মদ, গাঁজা আফিং, চরস, ভাং— কোনটা বা বাকি আছে।... ···সব নেশা করে দেখেছি। বোতল বোতল মদ খেয়েছি— একদিন বাইশ বোতল বিয়ার খেয়েছি।’ কিন্তু সে কোন্ গিরিশচন্দ্র জানি না, আমার সামনে তাঁকে দেখলুম না। এঁর ব্যক্তিত্বের ও গাম্ভীর্যের প্রভাবে মন অভিভূত হয়ে যায় প্রথম দর্শনেই। শ্রদ্ধা হয়, ভক্তি হয়, মাথা নত হয়।

 কয়েক মিনিট কাটল। তারপর তিনি মৃদু কণ্ঠে ধীরে ধীরে শুধোলেন, ‘কি দরকার বাবা?’

 —‘আজ্ঞে, আপনাকে দর্শন করতে এসেছি।’

 —‘এই জরাজীর্ণ দেহটা দেখতে এসেছেন? এটা তো কেবল আবরণ। আসল মানুষ থাকে ভেতরে।’

২৪