পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

আকর্ষণ করি। তার আগেও আমি কয়েকখানি ছোট-বড় পত্রিকার নিয়মিত লেখক ছিলুম বটে, কিন্তু সে ছিল আমার হাত-মক্সের যুগ।

 যতদূর মনে পড়ে, “ভারতী”তে আমার প্রথম রচনা প্রকাশিত হয় ১৩১৫ সালে। উড়িষ্যার শিল্প-সম্পর্কীয় প্রবন্ধ। আমি ঐ শ্রেণীর আরো কয়েকটি প্রবন্ধ রচনা করেছি শুনে স্বর্ণকুমারী চিঠি লিখে আমাকে তাঁর সঙ্গে দেখা করবার জন্যে আহ্বান করলেন।

 বালীগঞ্জের ‘সানি-পার্কে’ তাঁর সুসজ্জিত বাসভবন। নির্দিষ্ট দিনে বৈকালবেলায় সেখানে গিয়ে হাজির হলুম। বেয়ারা একতলার একখানা হল-ঘরে নিয়ে গেল। দেওয়ালে শ্রেষ্ঠ চিত্রকরদের আঁকা ছবি, মেঝের উপরে কার্পেট পাতা, সোফা, কৌচ, চেয়ার, টেবিল ও আধুনিক গৃহসজ্জার অন্যান্য মূল্যবান উপকরণের অভাব নেই। যেখানে যেটি মানায় তাই দিয়ে পরিপাটি ক’রে সাজানো।

 স্বর্ণকুমারী দেবী এলেন। বয়স তখন তাঁর পঞ্চাশ পার হয়েছে বোধ হয়, মাথার চুল সাদা হয়ে এসেছে, কিন্তু তখনো তিনি অপরূপ সুন্দরী। যেমন চমৎকার গঠন, তেমনি সুশ্রী মুখ-চোখ, গায়ের রংও পাকা ডালিমের মত। তাঁর মত রূপবতী লেখিকা আমি বাংলাদেশে আর দেখি নি।

 তাঁর সঙ্গে খানিকক্ষণ কথাবার্তা হবার পর বেয়ারা একথালা খাবার নিয়ে এল। বাড়ীতে তৈরি খাবার।

 স্বর্ণকুমারী বললেন, ‘খাও। তোমার জন্য তৈরি ক’রে রেখেছি।’ তারপর স্নেহময়ী জননীর মত সামনে ব’সে আমাকে একে একে সব খাবার না খাইয়ে ছাড়লেন না।

 তারপর অনেকবার গিয়েছি তাঁর কাছে, কিন্তু কোনবারই

৩১