পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

করেছেন। কিন্তু আজকালকার অনেক সমালোচক ভাঙা অমিত্রাক্ষর ছন্দ মোটেই পছন্দ করেন না।’

 মুখ থেকে আলবোলার নলটি সরিয়ে অমৃতলাল বললেন, ‘সমালোচকরা পছন্দ না করলে হবে কি, কিন্তু অভিনয়ের পক্ষে ভাঙা অমিত্রাক্ষরের উপযোগিতা যে কতখানি, অত-বড় সাহিত্যিক দ্বিজেন ঠাকুর পর্যন্ত অনেকদিন আগেই তা স্বীকার ক’রে গিয়েছেন। এই ছন্দটি প্রথমে প্রবর্তন করেন আর একজন সাহিত্যিকই, তিনি মহাত্মা কালিপ্রসন্ন সিংহ। তারপর যথাক্রমে রাজকৃষ্ণ রায় আর গিরিশচন্দ্র নাটক রচনায় এই ছন্দটিকে ব্যবহার করেন। কিন্তু গিরিশচন্দ্রের দ্বারা বার বার ব্যবহৃত হয়েছে ব’লেই এই ছন্দটির প্রচলন এতটা বেড়ে উঠেছে, আর সেই জন্যেই তার নাম দেওয়া হয়েছে “গৈরিশী-ছন্দ।”

 আমি বললুম, ‘কিন্তু কি গিরিশচন্দ্র, কি রাজকৃষ্ণ রায়, আর কি কালিপ্রসন্ন সিংহ, এঁরা কেহই এ-ছন্দের জন্য বাহাদুরি নিতে পারেন না।’

 —‘কেন পারেন না?’

 —‘কারণ এ ছন্দের প্রবর্তক হচ্ছেন অমিত্রাক্ষর ছন্দের স্রষ্টা মাইকেল মধুসূদনই।’

 অমৃতলাল সোজা হয়ে ব’সে বললেন, ‘আপনি কি বলছেন!’

 —‘আজ্ঞে হ্যাঁ। মাইকেল তাঁর দ্বিতীয় নাটক ‘পদ্মাবতী’তে সর্বপ্রথমে অভিনয়ের উপযোগী ভাষা খোঁজবার জন্যে ভাঙা অমিত্রাক্ষর ছন্দ নিয়ে স্থানে স্থানে অল্প-স্বল্প পরীক্ষা করেছিলেন। সুতরাং তাঁকেই অনায়াসে এর প্রবর্তক বলা চলে।’

 অত্যন্ত বিস্মিত হয়ে অমৃতলাল আবার বললেন, ‘আপনি কি বলছেন! এটা কি আপনার শোনা কথা?’

8০