পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

ভিতরে অকাতরে তরল আগুন বিতরণও করতে পারতেন।

 একদিন কবিবর অক্ষয়কুমার বড়াল, “অর্চনা”র সহযোগী সম্পাদক কৃষ্ণদাস চন্দ্র ও কবি ফণীন্দ্রনাথ রায়ের (ইনি এখন কবিতা লেখা ছেড়ে দিয়েছেন এবং এখনো জীবিত) সঙ্গে “সুরধামে” গিয়েছি। দ্বিজেন্দ্রলাল তখন আদালত থেকে সদ্যপ্রত্যাগত। বেয়ারা এসে তাঁর জামা-কাপড় বদ্‌লে দিয়ে গেল এবং সঙ্গে সঙ্গে টেবিলের উপরে রেখে গেল সোডা ও সুরা ভরা গেলাস। ঠিক সেই সময়ে তাঁর দুই পাশে এসে দাঁড়ালেন দুই পুত্র-কন্যা— বালক দিলীপকুমার ও বালিকা মায়া। পূর্বোক্ত আগন্তুকদের কেহই মদ্যপ ছিলেন না, কিন্তু দ্বিজেন্দ্রলাল কথা কইতে কইতে সকলেরই সামনে সুরাপান করতে লাগলেন অম্লানবদনে। সুরা যে ভালো জিনিষ, নিশ্চয়ই তিনি এটা বিশ্বাস করতেন না, কারণ তাঁর নানা রচনায় সুরার বিরুদ্ধে বহু কথাই আছে। কিন্তু সুরাপানের চেয়েও নিন্দনীয় হচ্ছে গোপনতা। আমি সুরাপান করি, কিন্তু মুখে তা স্বীকার করব না। এই মিথ্যা গোপনতা পাপ ছাড়া আর কিছু নয়। এ হচ্ছে ভাবের ঘরে চুরি।

 দ্বিজেন্দ্রলালের বৈঠকে যাঁদের প্রায়ই দেখেছি তাঁদের কেহই আর ইহলোকে বাস করেন না। ললিতচন্দ্র মিত্র (বড় মিষ্ট মানুষ ছিলেন তিনি), বিজয়চন্দ্র মজুমদার ও দেবকুমার রায় চৌধুরীর কথা আগেই উল্লেখ করেছি। এ ছাড়া আসতেন পক্ককেশ, কিন্তু সৌম্যসুন্দর প্রসাদদাস গোস্বামী (যাঁকে আদর্শ করে “পরপারে” নাটকের দাদামশাইয়ের চরিত্রটি চিত্রিত হয়েছে), “সাহিত্য” সম্পাদক সুরেশচন্দ্র সমাজপতি, আজ এ-কাগজ কাল ও-কাগজের সম্পাদক, কিন্তু পাকা লিখিয়ে পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কবিবর অক্ষয়কুমার বড়াল (তাঁর কথা পরে ভাল করে বলব) প্রভৃতি।

৪৭