পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

মাঝে মাঝে ললিতবাবুর অগ্রজ, দীনবন্ধু-পুত্র কবি বঙ্কিমচন্দ্র মিত্রকেও দেখেছি ব’লে মনে হচ্ছে। তা ছাড়া আরো কেউ কেউ আসতেন, কিন্তু তাঁরা সাহিত্যিক নন।

 একদিন বিজয়চন্দ্র মজুমদার বললেন, ‘দেখ দ্বিজু, থিয়েটারে তোমার “সাজাহান” নাটকে মহামায়া জাতীয় গানের সময়ে যে ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকে, তাতে তাকে মোটেই বীরনারী ব’লে মনে হয় না।’

 দ্বিজেন্দ্রলাল বললেন, ‘তা তো হয়ই না। মহামায়ার ভাব তখন এমনি-ধারাই হওয়া উচিত’ ব’লেই চেয়ারের উপরে সিধে হয়ে ব’সে, দুই বাহু পরস্পরের সঙ্গে বদ্ধ ক’রে অতিশয় এক দৃপ্ত ভাব ধারণ করলেন এবং তাঁর দুই চক্ষু দিয়ে যেন ঠিকরে পড়তে লাগল দীপ্তিমান শক্তি!

 দ্বিজেন্দ্রলাল কেন যে হঠাৎ তাঁর অনুরাগী রবীন্দ্রনাথের উপরে ক্রুদ্ধ হয়ে ‘প্রবাসী’ এবং ‘সাহিত্য’ পত্রিকায় তাঁকে তীব্র ও অশিষ্ট ভাষায় আক্রমণ ক’রে তখনকার সাহিত্য-সমাজে প্রবল এক আন্দোলন সৃষ্টি করেছিলেন, অনেকেরই কাছে সেটা রহস্যের মতই হয়ে আছে। কিন্তু আমার দৃঢ়বিশ্বাস, ওর মূলে ছিল সুরেশচন্দ্র সমাজপতি ও পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় প্রভৃতি জনকয়েক বন্ধুর প্ররোচনা। কারণ আমি ওঁদের স্বকর্ণে উস্কানি দিতে শুনেছি। দ্বিজেন্দ্রলাল ছিলেন ভাবে-ভোলা, উদার ও সরল বিশ্বাসী মানুষ। কিন্তু তাঁর কান পাৎলা ছিল, যুক্তিহীন হ’লেও বন্ধুদের কথা অবিশ্বাস করতে পারতেন না। এইটুকুই তাঁর দুর্বলতা।

 বারাণসী ঘোষ স্ট্রীট যেখানে শেষ হয়েছে, সেইখানে কর্ণওয়ালিশ স্ট্রীটের ফুটপাতের উপরে তাঁর সঙ্গে আমার শেষ দেখা। পায়ে চটিজুতো, পরনে আধময়লা কাপড় ও বোতাম-খোলা পাঞ্জাবী,

৪৮