পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

তাঁকে অভিনয় করতে দেখি নি, সুতরাং কেমন ক’রে তিনি কবিতা আবৃত্তি করতেন, সে কথা বলতে পারব না। তবে বিনা সুরে যে কবিতা আবৃত্তি করা যায়, এ কথা আমার বিশ্বাস হয় না।

 অভিনেতা আছেন দুই রকম। এক, যিনি নিজের ভূমিকার মধ্যে একেবারে তন্ময় হয়ে ডুবে যান; আর এক, যিনি থাকেন সচেতন, ভূমিকার মধ্যে নিজের অস্তিত্বকে ডুবিয়ে দিতে চান না। দুই দলেই বড় বড় অভিনেতাকে দেখা যায়। এদেশে প্রথম দলে ছিলেন অমৃতলাল মিত্র ও দানীবাবু প্রভৃতি। দ্বিতীয় দলে দেখি অর্ধেন্দুশেখর, অমৃতলাল বসু এবং এ যুগের শিশিরকুমার প্রভৃতিকে।

 অধিকাংশ অভিনেতাই বড় বড় ভূমিকার জন্যে লালায়িত হন। কিন্তু বড় বড় ভূমিকাভিনয়ের জন্যে অতুলনীয় যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও এবং নিজে নাট্যাচার্য হয়েও অর্ধেন্দুশেখর কখনো প্রধান রূপে পরিচিত হ’তে চান নি। প্রায়ই গ্রহণ করতেন ছোট ছোট অবান্তর ভূমিকা এবং প্রায়ই দেখা গিয়েছে তাঁর অপূর্ব অভিনয়নৈপুণ্যে সেই সব ছোট ছোট ভূমিকাই নাটকের মধ্যে অত্যন্ত প্রাধান্য বিস্তার করেছে। “রিজিয়া” পালায় সকলকে নাটকের পাঠ শিখিয়ে এবং এবং বড় বড় ভূমিকাগুলি অন্যান্য পাত্রপাত্রীর মধ্যে বিলি ক’রে তিনি নিজে নিলেন ঘাতকের ছোট্ট ভূমিকা। কিন্তু তাঁর অভিনয়গুণে সেই ক্ষুদ্র ভূমিকাই এতটা বিখ্যাত হয়ে উঠল যে, পরে শ্রেষ্ঠ নট ছাড়া আর কেউ সেই ভূমিকাটি গ্রহণ করতে সাহসী হ’ত না। “প্রতাপাদিত্য” নাটকের রডার ভূমিকাটি আগে আরো ছোট ছিল। পালাটি যখন খোলা হয়, তখন কোন নামজাদা নটই ঐ ভূমিকাটি গ্রহণ করতে রাজি হন নি। অবশেষে রডা সেজে দেখা দিলেন অর্ধেন্দুশেখর নিজেই। সঙ্গে সঙ্গে ভূমিকাটি এমন প্রধান

৮২