পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

আয়োজন ক’রে কলকাতার সমস্ত সাহিত্যিকদের করলেন সাদরে আমন্ত্রণ। অনুষ্ঠান হয় তাঁর বালীগঞ্জের বাগান-বাড়ীতে। তাঁর আমন্ত্রণ রক্ষা করেছিলেন বড়, মেজো, সেজো, ছোট প্রত্যেক সাহিত্যিকই—প্রমথ চৌধুরী থেকে আমার মত নগণ্য ব্যক্তি পর্যন্ত। সেইদিনই জগদিন্দ্রনাথকে প্রথম ভালো ক’রে কাছে পেয়ে উপলব্ধি করতে পারলুম, তিনি কেবল সুলেখক নন, সরস বাক্যালাপেও তাঁর অসাধারণ দক্ষতা, যে বিশেষ গুণটি আমি বিশেষভাবে লক্ষ্য করেছি রবীন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ ও অমৃতলাল বসুর সংলাপে। কথা কইতে কইতে তিনি সংস্কৃত সাহিত্য থেকে মুখে মুখেই উদ্ধার করতে লাগলেন ভূরি ভূরি শ্লোক। বুঝলুম সংস্কৃত সাহিত্যও তাঁর কণ্ঠস্থ। তাঁর আকৃতিও ছিল রাজোচিত; যাকে বলে সুপুরুষ, তিনি ছিলেন তাই। কোন দুর্ঘটনায় তাঁর একটি চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল বটে, কিন্তু সেজন্যে তাঁর মৌখিক-সৌন্দর্যহানি হয় নি।

 রসালাপ ও গল্পের ভিতর দিয়ে সকাল গড়িয়ে চলল দুপুরের দিকে। জগদিন্দ্রনাথ বললেন, ‘আর গল্প নয়, আহার্য আর আসন আপনাদের জন্যে অপেক্ষা ক’রে আছে, সকলে গাত্রোত্থান করুন।’

 আসনে গিয়ে উপবেশন ক’রে সামনেই দেখলুম আহার্যের যে সুবৃহৎ স্তূপ, তার সদ্ব্যবহার করতে হ’লে রীতিমত দুঃসাহসের প্রয়োজন। এটা আমার নিজের কথা। কিন্তু আমাদের দলের কেউ কেউ ছিলেন বিখ্যাত ঔদরিক, সেদিন তাঁদের আনন্দ যে সীমাহারা হয়েছিল, সে বিষয়ে আর সন্দেহ নেই। তবে সেদিন এমন একটি জিনিষ গলাধঃকরণ করবার সুযোগ হয়েছিল, যার আস্বাদ আজও ভুলতে পারি নি। সেটি হচ্ছে বিশেষরূপে বিখ্যাত নাটোরের কাঁচাগোল্লা। তাও পেলুম মাত্রাতিরিক্ত—ঠিক তালের মতই বৃহৎ একতাল সন্দেশ!

৯০