পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

দিয়ে গিয়েছেন এবং ভালো বক্তা মানেই ভালো লেখক। যে কোন লেখক বক্তা হ’তে পারেন না, কিন্তু যে কোন বক্তা লেখক হ’তে পারেন। বিখ্যাত বক্তারা প্রস্তুত হবার সময় পেলে বক্তব্য বিষয় নিয়ে আগে নিবন্ধ রচনা করেন। কেশবচন্দ্র সেন ও সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রভৃতি ভালো লেখক ছিলেন। বিপিনচন্দ্রও তাই। তিনি ছিলেন প্রথম শ্রেণীর সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। বহু দৈনিক ও মাসিক পত্রিকার সম্পাদকরূপে নিয়মিতভাবে লেখনী চালনা করেছেন এবং বাংলাতেও অসংখ্য সুচিন্তিত প্রবন্ধ লিখেছেন, সেগুলি আমাদের মাতৃভাষার সমুজ্জ্বল অলঙ্কার। দুঃখের বিষয়, সেগুলি অধুনালুপ্ত সাময়িক পত্রিকার অন্তরালেই আত্মগোপন ক’রে আছে। প্রকাশকরা সেগুলির দিকে কৃপাদৃষ্টিপাত করবার জন্যে আগ্রহ দেখান না, নাটক-নভেল নিয়েই তাঁদের হাত জোড়া। নাটক-নভেলও সাহিত্যের সম্পত্তি বটে, কিন্তু প্রবন্ধ-পুস্তকের দৈন্য কোন সাহিত্যকেই উচিতমত সমৃদ্ধ করতে পারে না।

 তিনি কেবল চিন্তাশীল নন, রীতিমত পণ্ডিত ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু দলাদলির আবর্তে প’ড়ে মাঝে মাঝে ঘুলিয়ে যেত তাঁর মনীষা। অন্যান্য অনেকের মত তিনিও বহু-প্রশংসিত ও বহুনিন্দিত রবীন্দ্রনাথকে আক্রমণ ক’রে যারপরনাই অবিচার করেছেন। কতকগুলো কষ্টকল্পিত ও মূল্যহীন যুক্তির সাহায্যে তিনি রবীন্দ্রনাথের কাব্য গল্প, উপন্যাস, ও প্রবন্ধাবলীকে নস্যাৎ ক’রে দেবার চেষ্টা করেছিলেন। একবার নয়, দুইবার নয়, বার বার। রবীন্দ্র-রচনার পাঠক আজ পৃথিবীব্যাপী, কিন্তু তাঁর সে-সব রচনার পাঠক নেই আজ একজনও। বৃথাই তিনি এঁকে গেলেন জলের আল্পনা।

 শেষের দিকে তিনি রাজনীতির চেয়ে সাহিত্যের চর্চাই করতেন বেশী। চিত্তরঞ্জন দাশের (তখনও তিনি ‘দেশবন্ধু’ উপাধিলাভ

৯৭