পাতা:যাত্রাবদল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SN) যাত্রাবদল বড় ডাক্তার হইয়া ফিরিয়া আসিতেছে, সাহেবী মেজাজ এখন তার-এ ধরণের বে-মেরামতি পুরানো বাড়ীতে থাকিতে তাহার কষ্ট হইবে। সতীশ ছেলের উপযুক্ত মত বাড়ীর পুনরায় সংস্কার করিতে অনেক ব্যয় করিয়া ফেলিল। এইখানে ডাক্তারখানা হইবে, এইটী ছেলের বসিবার ঘর, এইটী নাতিদের পড়িবার ঘর। হঠাৎ মেসোপোটেমিয়া হইতে বিনয়ের পত্র আসা বন্ধ হইয়া গেল। দু'দশদিন করিয়া মাসখানেক কোনো খবর নাই-সতীশ অত্যন্ত ধৈৰ্য্যশীল, সে নিজে অটল থাকিয়া স্ত্রী ও পুত্র-বধূকে নানা মিথ্যা স্তোকবাক্যে ভুলাইয়া রাখিবার চেষ্টা করে, ক্রমে গ্ৰামময় গুজব রাটিয়া গেল বিনয় আর নাই, যুদ্ধে মারা পড়িয়াছে। বিনয়কে গ্রামের সকলেই ভালবাসিত, তাহার সুন্দর চেহারা ও মধুর ব্যবহারের গুণে বিনয়কে কেহ পর ভাবিত না । এ দুঃসংবাদে চোখের জল ফেলিল না, এমন লোক নাই গ্রামে। সতীশের সাহা করিবার শক্তি দেখিয়া সকলে অবাক হইয়া গেল, তাহার মুখে একদিন কেহ কোনো দুর্বল কথা শুনিল না-চোখে জল দেখা তো দূরের কথা । জ্যৈষ্ঠ মাস। ভীষণ গরম। মুখুয্যে বাড়ির তেঁতুল-তলার সামনে একখানা ভাঙা গরুর গাড়ির উপর বসিয়া পাড়ার নিষ্কৰ্ম্ম যুবকের আডডা দিতেছে—এমন সময়ে সাইকেলে মোড়ের মাথায় সাহেবী-পোষাকে কাহাকে আসিতে দেখা গেল। বিনয় ! মুখুয্যে গিল্পী স্নানান্তে শিব-পূজা করিতে বসিয়াছিলেন, পূজা ফেলিয়া ছুটিতে ছুটিতে পথের ধারে আসিলেন অর্থাৎ তাহার পায়ের বাতের দরুণ যতটুকু ছোটা তার পক্ষে সম্ভব হয় ততটুকু বেগে বিনয়কে বুকের মধ্যে জড়াইযা কঁাদিয়া ফেলিলেন, যুবকেরা সকলে বলিল, আচ্ছা ভয় দেখিয়েছিলেন বিনয়-দা, বেশ যা হোক। — বিদ্যুৎ বেগে গ্রামের সর্বত্র বিনয়ের প্রত্যাবৰ্ত্তনের সংবাদ প্রচারিত হইবার সঙ্গে সঙ্গে সতীশ ডাক্তারের বাড়ির উঠানে সব পাড়ার লোক ভাঙিয়া পড়িল । বিভিন্ন পাড়ায় সেদিন সন্ধ্যায় গ্রামের মেয়ের হরিল্পটি দিল ।