পাতা:যাত্রাবদল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bሥ যাত্রাবদল তারপর এল একটা সুদীর্ঘ ব্যবধান । ছেলেবেলার মত মামার বাড়িতে আর তত যাইনে, গেলেও এক-আধা দিন থাকি । সেই এক-আধা দিনের মধ্যে পথে যেতে যেতে হয়ত দেখি, জঙ্গলের মধ্যে ভঙুলমামার বাড়িটা তেমনি জনহীন পড়ে আছে • • • বনজঙ্গল চারিপাশে আরও গভীরতর, কেউ কোনদিন ও-বাড়িতে পা দিয়েচে ব’লে মনে হয় না - একটা ছন্নছাড়া, লক্ষ্মীছাড়া চেহারা, শীতের সন্ধ্যায় বর্ষার দিনে, চৈত্র-বৈশাখের দুপুরে কত বার ও-বাড়িটা দেখোঁচি, সেই একই মূৰ্ত্তি এমনি ক’রে বছর কয়েক কেটে গেল। ক্রমে এণ্টেন্স পাম দিয়ে কলকাতায় এসে কলেজে ঢুকলুম । সেবার সেকেণ্ড ইয়ারের শেষ, এফ-এ দেব, কি একটা দরকারে মামার বাড়ি গিয়েচি । বোধ করি মাঘ মাসের শেষ। দুপুরে পুবের ঘরে জানালার ধারে খাটে শুয়ে আছি, বোধ হয় একখানা লজিকের বই পড়চি, এমন সময়ে একজন কালো, শীর্ণকায় প্রৌঢ় লোক ঘরে ঢুকলেন। বড় মামীম বললেন- এই তোর ভঙুলমামা, প্ৰণাম করু। আমার সে ছেলেবেলাকার মনের অনেক পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল, বয়স হয়েচে, কলেজে পড়ি ; নানা ধরণের লোকের সঙ্গে মিশেছি, সুরেন বঁািড়য্যে ও বিপিন পালের বক্তৃতা শুনেছি, স্বদেশী মিটিঙে। ভলান্টিয়ারী করেছি, জীবনের দৃষ্টিভঙ্গীই গেছে বদলে - তখন মনের কোন গভীর তলদেশে আরও পাচটা পুরোণো দিনের আদর্শেরও কৌতুহলের বস্তুর স্তপের সঙ্গে ভঙুলমামা ও তার বাড়িও চাপা পডে গিয়েছে। তাই ঈষৎ অবজ্ঞামিশ্ৰিত চোখে সামান্য একটু কৌতুহলের সঙ্গে চেয়ে দেখলুম মাত্ৰ-ভঙুলমামার ব্যস পঞ্চাশের ওপর হবে, টিকিতে একটা মাদুলী বাধা, গলায় কিসের মালা, কঁচাপাকা একমুখ দাড়ি। এই সেই ছেলেবেলাকার ভঙুলমামা ! উদাসীন ভাবে প্ৰণামটা সেরে ফেললুম। ভঙুলমামা কিন্তু আমার সঙ্গে খুব আলাপ করলেন, একটু গায়ে পড়েই যেন।