পাতা:যাত্রাবদল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভঙুলমামার বাড়ী S9 তারপর সারারাত ধ’রে চারিধারে শুধু প্রহরে প্রহরে শৃগালের রব ও নৈশপাখীর ডানা ঝটপট ! আমার মামারাও গ্রামের ঘর-বাড়ি ছেড়ে শহরে বাসা করেছেন। ছোটমামার ছেলের অন্নপ্রাশন উপলক্ষ্যে সেখানে একবার গিয়েছি। ব্ৰাহ্মণভোজনের কিছু আগে একজন শীর্ণকায় বৃদ্ধ একটা পুটুলি-হাতে বাড়িতে ঢুকলেন। এক পা ধুলো, বগলে একটা ময়লা সাদা কাপড়বসানো বাঁশের বাটের ছাতা। প্রথমটা চিনতে পারিনি। পরে বুঝলুম ভঙুলমামা। ভঙুলমামা এত বুড়ো হয়ে পড়েছেন এর মধ্যে !- শহরে এসে মামাদের নতুন সভ্য, সেখীন আলাপী বন্ধুবান্ধব জুটেছে, তাদের পোষাক-পরিচ্ছদের ধরণে ও কথাবাৰ্ত্তার সুরে ভঙুলমামা কেমন ভয় খেয়ে সঙ্কোচের সঙ্গে নিমন্ত্রিত ভদ্রলোকদের সতরঞ্চির এককোণে বসলেন । তিনিও, নিমন্ত্রিত হয়েই এসেছিলেন বটে, কিন্তু মামারা তখন শহুরে বন্ধুদের আদরঅভ্যর্থনায় মহা ব্যস্ত ; তঁর আগমন কেউ বিশেষ লক্ষ্য করেছে এমন মনে ठू'व्ा •ा । আমি গিয়ে ভঙুলমামার কাছে বসলুম। চারিধারে অচেনা মুখের মধ্যে আমায় দেখে ভঙুলমামা খুব খুশী হলেন। আমি জিগ্যেস করলুম-আপনি কি কলকাতা থেকে আসছেন ? ভঙুলমামা বললেন,--না বাধা, আমি রিটায়ার করেছি আজ বছর-পাঁচেক হবে । গায়ের বাড়িতেই আছি । ছেলেরা কেউ আসতে চায় না । অন্নপ্রাশন শেষ হয়ে গেল। ভঙুলমামা কিন্তু মামার বাড়ি থেকে আর নড়তে চান না। চার-পাচ দিন পরে কিছু চাল-ডাল ও বাসি সন্দেশ-রসগোল্লা নিয়ে দেশে রওনা হলেন । পায়ে দেখি কটক থেকে কিনে-আনা বড় মামার সেই পুরোনো চটি জুতো জোড়া। আমায় দেখিয়ে বললেন,- নবীন কটক থেকে । এনেছে, দেখে বড় সখী হ’ল, বয়েস হয়েছে কবে মরে যাব, বললুম তা দাও নবীন,