পাতা:যাত্রাবদল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উইলের খেয়াল V9) দু-দশ জন ব্ৰাহ্মণের পাতে দু-মুঠো ভাত দিয়ে যদি ভালয় ভালয় দিনগুলো কাটাতে পারি, তবে তো মুখ থাকে লোকের কাছে। সেই আশীৰ্ব্বাদ করে তোমরা সকলে । সন্ধ্যার অন্ধকার চারিধারে খুব গাঢ় হয়েচে । ট্রেন হু হু ক’রে অন্ধকার মাঠ, বঁাশবন, বিল, জলা আখের ক্ষেত মাঝে মাঝে ঘন অন্ধকারের মধ্যে জোনাকী-জলা ঝোপ পার হ’য়ে উড়ে চলেচে, মাঝে মাঝে ছোট ছোট গ্রাম, খড়ে-ছাওয়া বিশত্ৰিশটা চালাঘর এক জায়গায় জড়াজড়ি ক’রে আছে, দু-চার দশটা মিটুমিটে আলো জলে অন্ধকারে ঢাকা গাছপালায় ঢাকা গ্রামগুলোকে কেমন একটা রহস্যময় রূপ দিয়েচে । একটা বড় গ্রামের ষ্টেশনে অবনী তার বেী ও ছেলেমেয়ে নিয়ে নেমে গেল । ষ্ট্রেশনের বাইরে একখানা ছাইওয়ালা গরুর গাড়ী দাড়িয়ে আছে বোধ হয়। ওদেরই জন্যে। অবনীর বেীকে এবার প্ল্যাটফৰ্ম্মের তেলের লণ্ঠনের অস্পষ্ট আলোয় দেখে আরও বেশী ক’রে মনে হ’ল যে মেয়েটি সত্যিই সুশ্ৰী। বেশ ফর্সা রং, সুঠাম বাহু দুটির গড়ন, চলনভঙ্গী ও গলার সুরের সবটাই মেয়েলি। এমন নিখুত মেয়েলি ধরণের মেয়ে দেখবার একটা আনন্দ আছে, কারণ সেটা দুস্তপ্রাপ্য। ট্রেনখানা প্ৰায় দশ মিনিট দাড়িয়ে রইল ; একজন লোক হারিকেন লণ্ঠন নিয়ে ওদের এগিয়ে নিতে এসেছিল, ওরা তার সঙ্গে ষ্টেশনের বাহিরে যেতে গিয়ে ফটক খোলা না পেয়ে দাড়িয়ে রইল, কারণ যিনি ষ্টেশন-মাষ্টার তিনিই বোধ হয় টিকিট নেবেন যাত্রীদের কাছ থেকে--ফটকে চাবী দিয়ে তিনি গার্ডকে দিয়ে প্ল্যাটফৰ্ম্মের মধ্যে আঁধারে লণ্ঠনের আলোয় কি কাগজপত্র সই করাচ্ছিলেন। তারপর ট্রেন আবার চলতে লাগল-আবার সেই রকম ঝোপ-ঝাপ, অন্ধকারে ঢাকা ছোট-খাট গ্রাম, বড় বড় বিল, বিলের ধারে বাগদীদের কুঁড়ে। আমার ভারি ভাল লাগছিল - এই সব আজান ক্ষুদ্র গ্রামে ঘরে ঘরে অবনীর বৌয়ের মত কত