পাতা:যাত্রাবদল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উইলের খেয়াল Vo পূৰ্ণবাবুর পিসিমা ওঁদের আদৌ বাড়িতে ডাকেন না, পূৰ্ণবাবুকেও না, পূর্ণবাবুর বে। ছেলেমেয়ে কাউকে না। পিসীমার কাছে খাতির পেলে বাজারেও পূর্ণবাবুর খাতির থাকুতো-অনেকে বলতে লাগলো পূৰ্ণবাবুর পিসীমা ওদের দেখতে পারে না, সমস্ত সম্পত্তি হয়ত দেবোত্তর ক’রে দিয়ে যাবে-একটি পয়সাও দেবে না। ওদের । পূৰ্ণবাবুর পিসীমার বিশ্বাস যে এরা তাকে বিষ খাইয়ে মারবে-ষত বয়স হচ্ছে এ বিশ্বাস আরও দিন দিন বাড়চে—এতে ক’রে হয়েচে এই যে পূর্ণবাবুর, কি পূর্ণবাবুর স্ত্রীর, কি পূৰ্ণবাবুর ছেলেমেয়ের পিসিমার বাড়ির ত্রি-সীমানায় ঘেঁসবার যে নেই। কাজেই অত বড় সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়েও পূর্ণবাবু আজ ত্ৰিশ টাকা মাইনের আমীনগিরি করচেন । আমি পূৰ্ণবাবুর এ গল্প বিশ্বাস করিনি। কিন্তু সেটেলমেণ্ট ক্যাম্পে আমরা একসঙ্গে দেড় বছরের উপর ছিলাম-এই দেড় বৎসরের প্রায় প্ৰতিদিনই সন্ধ্যায় কি রাত্রে এক সঙ্গে বসবার সুযোগ হ’লেই পূৰ্ণবাবু আমায় তঁর পিসিমার সম্পত্তির গল্প করতেন। কখন কোনটা হয়ত ব’লে ফেলেচেন ছ-মাস আগে তার মনে থাকবার কথা নয়, আবার আজ যখন নতুন কথা বলচেন ভেবে বললেন তখন খুটিনাটি ঘটনাগুলোও ছ-মাস আগের কাহিনীর সঙ্গে মিলে যেত।-নানা টুকরো কথার জোড়াতালি মিলিয়ে এই দেড় বছরে পূর্ণবাবুর সমস্ত গল্পটা আমি জেনেছিলুম—এক দিন তিনি বসে আগাগোড়া গল্প আমায় করেন নি, সে ধরণের গল্প করার ক্ষমতাও ছিল না পূৰ্ণবাবুর। সেই থেকে পুর্ণবাবুর দুর্দশার সূত্রপাত হ’ল। বন্ধু-বান্ধব ছেড়ে গেল, শ্বশুরবাড়িতে খাতির কমে গেল, সংসারে দারিদ্র্যের ছায়া পড়ল । দু-এক জন হিতৈষী বন্ধুর পরামর্শে পূৰ্ণবাবু আমীনের কাজ শিখতে গেলেন-ছেলেকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন ।