পাতা:যাত্রাবদল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাইশ বছর \ যাওয়াতে দিন তিনেক ইস্কুল কামাই হোল-তারপর যেদিন ইস্কুলে গেলাম, ফণিমাষ্টারের ক্লাসের পড়া হােল না। ফণিমাষ্টার আমার চুল ধরে টেনে বল্পেবুড়োধাড়ী কোথাকার, শিং ভেঙ্গে বাছুরের দলে মিশেচে-আবার ইস্কুল কামাই করে ! ছেলেরা অনেকে খিলখিল করে হেসে উঠল আমার দুৰ্দশায় খুসি হয়ে। বাবার আপিসের পেন্সিলের ও ‘পেন্সিল-ঘষা' রবারের প্রত্যাশা রাখতে যে সব ছেলে, তারাই চুপ করে রইল। এই আমি প্রথম জানলুম যে আমার বয়েস বেশী । এর আগে কেউ আমাকে এ-কথা বলেনি। বাড়ীতে দিদি ছিলেন আমার চেয়ে বড়। মা বাবা এদের মুখে। কখনও আমার বয়েস সম্বন্ধে শ্লেষ-সুচক কোনো কথা শুনিনি । কিন্তু আজ থেকে আমার ধারণা বদলে গেল-তখন বুঝলাম কেন ক্লাসের ছেলেরা আমায় ‘কানুদা’ বলে ডাকে। এবং এই দিনটি থেকে ক্লাসের পড়া না বলতে পারার অক্ষমতার চেয়েও আমার বয়েসের লজ্জায় সবসময় সঙ্কুচিত হ’য়ে থাকতুম। ফণিমাষ্টারও কি প্রতিবারই প্ৰতি পদে পদেই আমার সে গোপন লজ্জা, যা আমি লোক চক্ষুর আড়াল থেকে লুকিয়ে রাখতে প্ৰাণপণ করি,-তাই ঢাক পিটিয়ে সকলের সামনে প্রচার করবে। আর আমার সে অত্যন্ত নিভৃত গোপন ব্যথার স্থানে কারণে অকারণে আঘাত করবে নিৰ্ম্মম ভাবে? এদিকে বয়েসের তুলনায় আমি একটু লম্বা ছিলাম। একদিন গ্রামারের কি ভুল বার হোতেই ফণিমাষ্টার বল্লে-নাঃ, এ ধাড়ী ছোড়াটাকে নিয়ে আর পারা গেল না দেখাচি। বলি গোপ দাড়ী যে লতিয়ে চললো, এখনও নাউনের পার্সিং শিখলে না ? আমার চোখে লজ্জায়, অপমানে জল এল। আমার মনে হোল বাস্তবিকই আমার বয়েস বেশী, তাতে নীচের ক্লাসের ছোট ছোট ছেলেদের সঙ্গে পড়া আমার পক্ষে লজ্জার কথা- প্ৰতিদিন ওদের চোখের সামনে আমি এরকমভাবে বকুনি খেতে আর পারিনে, বিশেষ ক'রে ওই ছোট ছোট ছেলেরা - যারা আমায় দাদা ? বলে ডাকে, তাদের সামনেই আমার এ অপমানের লজ অসহ ।