নবীন কাতর হয়ে বললে, “দাদার উড়ে চাকরটা ওঁর দামি ডিনারসেটের একটা পিরিচ ভেঙেছিল, তার জরিমানার প্রধান অংশ আমাকে দিতে হয়েছে, জান তো,— কেন না জিনিসগুলো আমারই জিন্মে। কিন্তু এবারে যে-জিনিসটা ঘরে এল সেও কি আমারই জিম্মে? তবু জরিমানাটা তোমাতে-আমাতেই বাঁটোয়ারা করে দিতে হবে। অতএব যা করতে হয় করো, আমাকে আর দুঃখ দিও না মেজোবউ।”
“জরিমানা বলতে কী বোঝায় শুনি।”
“রজবপুরে চালান করে দেবেন। মাঝে মাঝে তো সেইরকম ভয় দেখান।”
“ভয় পাও বলেই ভয় দেখান। একবার তো পাঠিয়েছিলেন, আবার রেলভাড়া দিয়ে ফিরিয়ে আনতে হয় নি? তোমার দাদা রেগেও হিসেবে ভুল করেন না। জানেন আমাকে ঘরকন্না থেকে বরখাস্ত করলে সেটা একটুও সস্তা হবে না। আর যদি কোথাও এক পয়সাও লোকসান হয় সে-ঠকা ওঁর সইবে না।”
“বুঝলুম, এখন কী করতে হবে বলো না।”
“তোমার দাদাকে ব’লো, যতবড়ো রাজাই হন না, মাইনে করে লোক রেখে রানীর মান ভাঙাতে পারবেন না— মানের বোঝা নিজেকেই মাথায় করে নামাতে হবে। বাসরঘরের ব্যাপারে মুটে ডাকতে বারণ কোরো।”
“মেজোবউ, উপদেশ তাঁকে দেবার জন্যে আমার দরকার হবে না, দুদিন বাদে নিজেরই হুঁশ হবে। ইতিমধ্যে দূতীগিরির কাজটা করো, ফল হোক বা না হোক। দেখাতে পারব নিমক খেয়ে সেটা চুপচাপ হজম করছি নে।”
মোতির মা কুমুকে গেল খুঁজতে। জানত সকালবেলা তাকে পাওয়া যাবে ছাদের উপরে। উঁচু প্রাচীর-দেওয়া ছাদ, তার মাঝে মাঝে ঘুলঘুলি।