পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

বলে বড়াই করেছিল সেইদিন থেকে মধুসূদনের কাছে ওর দাদার উল্লেখমাত্র করতে ওর মুখে বেধে যায়। আজ মোতির মাকে বললে, “তুমি যদি দাদাকে আমার নামে টেলিগ্রাফ করতে পার তো আমি বাঁচি।”

 মোতির মা বললে, “তাই করব, ভয় কী?”

 কুমু বললে, “তুমি জান, আমার কাছে একটিও টাকা নেই।”

 “কী বল, দিদি, তার ঠিক নেই। সংসারখরচের যে-টাকা আমার কাছে থাকে, সে তো তোমারই টাকা। আজ থেকে আমি যে তোমারই নিমক খাচ্ছি।”

 কুমু জোর করে বলে উঠল, “না না না, এ-বাড়ির কিছুই আমার নয়, সিকি পয়সাও না।”

 “আচ্ছা ভাই, তোমার জন্যে না হয়, আমার নিজের টাকা থেকে কিছু খরচ করব। চুপ করে রইলে কেন? তাতে দোষ কী? টাকাটা আমি যদি অহংকার করে দিতুম, তুমি অহংকার করে না নিতে পারতে। ভালোবেসে যদি দিই, তাহলে ভালোবেসেই নেবে কেন?”

 কুমু বললে, “নেব।”

 মোতির মা জিজ্ঞাসা করলে, “দিদি, তোমার শোবার ঘর কি আজও শূন্য থাকবে?”

 কুমু বললে, “ওখানে আমার জায়গা নেই।”

 মোতির মা পীড়াপীড়ি করলে না। তার মনের ভাবখানা এই যে, পীড়াপীড়ি করবার ভার আমার নয়; যার কাজ সে করুক। কেবল আস্তে আস্তে সে বললে, “একটু দুধ এনে দেব তোমার জন্যে?”

 কুমু বললে, “এখন না, আর একটু পরে।” তার ঠাকুরের সঙ্গে

১০৬