পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 মধু গম্ভীরমুখে সংক্ষেপে উত্তর করলে, “বিবাহ করতেও সময় নষ্ট, বিবাহ করেও তাই। আমার ফুরসত কোথায়?”

 পীড়াপীড়ি করে এমন সাহস ওর মায়েরও নেই, কেননা সময়ের বাজার-দর আছে। সবাই জানে, মধুসূদনের এক কথা।

 আরও কিছুকাল যায়। উন্নতির জোয়ার বেয়ে কারবারের আপিস মফস্বল থেকে কলকাতায় উঠল। নাতিনাতনীর দর্শনসুখ সম্বন্ধে হাল ছেড়ে দিয়ে মা ইহলােক ত্যাগ করলে। ঘােষাল-কোম্পানির নাম আজ দেশবিদেশে, ওদের ব্যবসা বনেদি বিলিতি কোম্পানির গা ঘেঁষে চলে, বিভাগে বিভাগে ইংরেজ ম্যানেজার।

 মধুসূদন এবার স্বয়ং বললে, বিবাহের ফুরসত হল। কথার বাজারে ক্রেডিট তার সর্বোচ্চে। অতিবড় অভিমানী ঘরেরও মানভঞ্জন করবার মতাে তার শক্তি। চারদিক থেকে অনেক কুলবতী রূপবতী গুণবতী ধনবতী বিদ্যাবতী কুমারীদের খবর এসে পৌঁছােয়। মধুসূদন চোখ পাকিয়ে বলে, ওই চাটুজ্যেদের ঘরের মেয়ে চাই।

 ঘা-খাওয়া বংশ ঘা খাওয়া নেকড়ে বাঘের মতো, বড়াে ভয়ংকর।


 এইবার কন্যাপক্ষের কথা।

 নুরনগরের চাটুজ্যেদের অবস্থা এখন ভালাে নয়। ঐশ্বর্যের বাঁধ ভাঙছে। ছয়-আনি শরিকরা বিষয় ভাগ করে বেরিয়ে গেল, এখন তারা বাইরে থেকে লাঠি হাতে দশ-আনির সীমানা খাবলে বেড়াচ্ছে। ছাড়া রাধাকান্ত জীউর সেবায়তি অধিকার দশে-ছয়ে যতই সূক্ষ্মভাবে ভাগ করবার চেষ্টা চলছে, ততই তার শস্য অংশ স্থূলভাবে উকিলমােক্তারের আঙিনায় নয়-ছয় হয়ে ছড়িয়ে পড়ল, আমলারাও বঞ্চিত হল না

১১