পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 নবীন ভালোমানুষের মতো বললে, “কী করব বলো, মেয়েমানুষের জেদ। কী জানি, তার মনে হয়েছে, কোন্ কথা নিয়ে তুমি হয়তো একদিন হঠাৎ তাকে সরিয়ে দেবে, সে অপমান তার সইবে না— তাই সে একেবারে পণ করে বসেছে সে যাবেই। আসছে ত্রয়োদশী তিথিতে দিন পড়েছে— এর মধ্যে কাজকর্ম সব গুছিয়ে দিয়ে হিসাবপত্র চুকিয়ে সে চলে যেতে চায়।”

 মধুসূদন বললে, “দেখো নবীন, মেজোবউকে আদর দিয়ে তুমিই বিগড়ে দিয়েছ। তাকে একটু কড়া করেই ব’লো সে কিছুতেই যেতে পারবে না। তুমি পুরুষমানুষ, ঘরে তোমার নিজের শাসন চলবে না, এ আমি দেখতে পারি নে।”

 নবীন মাথা চুলকিয়ে বললে, “চেষ্টা করে দেখব দাদা, কিন্তু—”

 “আচ্ছা, আমার নাম করে ব’লো, এখন তার যাওয়া চলবে না। যখন সময় বুঝব তখন যাবার দিন আমিই ঠিক করে দেব।”

 নবীন বললে, “তুমি বললে কিনা মেজোবউকে দেশে পাঠাতে হবে তাই ভাবছি—”

 মধুসূদন উত্তেজিত হয়ে বললে, “আমি কি বলেছি, এই মুহূর্তেই পাঠিয়ে দিতে হবে?”

 নবীন ধীরে ধীরে চলে গেল। মধুসূদন একটা গ্যাসের শিখা জ্বালিয়ে দিয়ে লম্বা কেদারায় ঠেসান দিয়ে বসে রইল। বাড়ির চৌকিদার রাত্রে এক-একবার বাড়ির ঘরগুলোর সামনে দিয়ে টহলিয়ে আসে। মধুসূদনের অল্প একটু তন্দ্রার মতো এসেছিল, এমন সময় হঠাৎ চমকিয়ে উঠে দেখে চৌকিদার ঘরে ঢুকে লণ্ঠন তুলে ধরে তার মুখের দিকে চেয়ে আছে। হয়তো সে ভাবছিল, মহারাজ মূর্ছাই গেছে, না মারাই গেছে। মধুসূদন লজ্জিত হয়ে ধড়ফড় করে চৌকি থেকে

১২১