উজ্জ্বলতায় রমণীর বিস্ময়ের সীমা নেই। মধুসূদন রাজকীয় গাম্ভীর্যের সঙ্গে বললে, তােমার যেটা ইচ্ছে পছন্দ করে নাও। হীরেটাই কুমু যখন পছন্দ করলে তখন তার লুব্ধতার ক্ষীণ সাহস দেখে ঈষৎ হাস্য করে মধুসুদন তিনটে আংটিই কুমুর তিন আঙুলে পরিয়ে দিলে। তার পরেই রাত্রে শয়নমঞ্চের যবনিকা উঠল।
মধুসূদনের অভিপ্রায় ছিল এই ব্যাপারটা আজ রাত্রের আহারের পর হবে। কিন্তু দুপুরবেলাকার দুর্যোগের পর মধুসূদন আর সবুর করতে পারলে না। রাত্রের ভূমিকাটা আজ অপরাহ্ণে সেরে নেবার জন্যে অন্তঃপুরে গেল।
গিয়ে দেখে কুমু একটা টিনের তােরঙ্গ খুলে শোবার ঘরের মেজেতে বসে গােছাচ্ছে। পাশে জিনিসপত্র কাপড়চোপড় ছড়ানাে।
“এ কী কাণ্ড? কোথাও যাচ্ছ নাকি?”
“হাঁ”
“কোথায়?”
“রজবপুরে।”
“তার মানে কী হল?”
“তােমার দেরাজ খােলা নিয়ে ঠাকুরপােদের শাস্তি দিয়েছ। সে-শাস্তি আমারই পাওনা।”
“যেয়াে না” বলে অনুরােধ করতে বসা একেবারেই মধুসূদনের স্বভাববিরুদ্ধ। তার মনটা প্রথমেই বলে উঠল—যাক না দেখি কতদিন থাকতে পারে। এক মুহূর্ত দেরি না করে হন হন করে ফিরে চলে গেল।