পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

গেল দুটিই মেয়ের গলা। তবে তো বিচ্ছেদের পূর্বরাত্রে মোতির মায়ের সঙ্গে কুমুরই মনের কথা হচ্ছে। রাগে ক্ষোভে ইচ্ছে করতে লাগল, লাথি মেরে দরজা খুলে ফেলে একটা কাণ্ড করে। কিন্তু নবীনটা তাহলে কোথায়? নিশ্চয় বাইরে।

 অন্তঃপুর থেকে বাইরে যাবার ঝিলমিল-দেওয়া রাস্তাটাতে লণ্ঠনে একটা টিম্‌টিমে আলো জ্বলছে, সেইখানে এসেই মধুসূদন দেখলে একখানা লাল শাল গায়ে জড়িয়ে শ্যামা দাঁড়িয়ে। তার কাছে লজ্জিত হয়ে মধুসূদন রেগে উঠল। বললে, “কী করছ এত রাত্রে এখানে?”

 শ্যামা উত্তর করলে “শুয়ে ছিলুম। বাইরে পায়ের শব্দ শুনে ভয় হল, ভাবলুম বুঝি—

 মধুসূদন তর্জন করে বলে উঠল, “আস্পর্ধা বাড়ছে দেখছি। আমার সঙ্গে চালাকি করতে চেয়ো না, সাবধান করে দিচ্ছি। যাও শুতে।”

 শ্যামাসুন্দরী কয়দিন থেকে একটু একটু করে তার সাহসের ক্ষেত্র বাড়িয়ে বাড়িয়ে চলছিল। আজ বুঝলে, অসময়ে অজায়গায় পা পড়েছে। অত্যন্ত করুণ মুখ করে একবার সে মধুসূদনের দিকে চাইলে—তার পরে মুখ ফিরিয়ে আঁচলটা টেনে চোখ মুছলে। চলে যাবার উপক্রম করে আবার সে পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে ডেকে বলে উঠল, “চালাকি করব না ঠাকুরপো। যা দেখতে পাচ্ছি তাতে চোখে ঘুম আসে না। আমরা তো আজ আসি নি, কতকালের সম্বন্ধ, আমরা সইব কী করে?” বলে শ্যামা দ্রুতপদে চলে গেল।

 মধুসূদন একটুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল, তার পরে চলল বাইরের ঘরে। ঠিক একেবারে পড়ল চৌকিদারের সামনে, সে তখন টহল দিতে বেরিয়েছে। এমনি নিয়মের কঠিন জাল যে, নিজের

১৪৬