পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

ভরে নৈবেদ্য দেবার জন্যেই সে পণ করে আছে, কিন্তু সে নৈবেদ্য এখনও এসে পৌঁছল না। মন বলছে, একটু সবুর করলেই, পথে বাধা না দিলে, এসে পৌঁছবে; দেরি যে আছে তাও না। তবুও এখনও ডালা যে শূন্য সে-কথা মানতেই হবে।

 কুমু বললে, “তোমাকে ফাঁকি দিতে চাই নে বলেই বলছি, একটু আমাকে সময় দাও!”

 মধুসুদন ক্রমেই অসহিষ্ণু হতে লাগল—কড়া করেই বললে, “সময় দিলে কী সুবিধে হবে। তোমার দাদার সঙ্গে পরামর্শ করে স্বামীর ঘর করতে চাও!”

 মধুসূদনের তাই বিশ্বাস। সে ভেবেছে বিপ্রদাসের অপেক্ষাতেই কুমুর সমস্ত ঠেকে আছে। দাদা যেমনটি চালাবে, ও তেমনি চলবে। বিদ্রূপের সুরে বললে, “তোমার দাদা তোমার গুরু!”

 কুমুদিনী তখনই মাটি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললে, “হ্যাঁ, আমার দাদা আমার গুরু।”

 “তাঁর হুকুম না হলে আজ কাপড় ছাড়বে না, বিছানায় শুতে আসবে না। তাই নাকি?”

 কুমুদিনী হাতের মুঠো শক্ত করে কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।

 “তাহলে টেলিগ্রাফ করে হুকুম আনাই,— রাত অনেক হল।”

 কুমু কোনো জবাব না দিয়ে ছাতে যাবার দরজার দিকে চলল।

 মধুসূদন গর্জন করে ধমকে উঠে বললে, “যেয়ো না বলছি।”

 কুমু,তখনই ফিরে দাঁড়িয়ে বললে, “কী চাও, বলো।”

 “এখনই কাপড় ছেড়ে এস।” ঘড়ি খুলে বললে, “পাঁচ মিনিট সময় দিচ্ছি।”

১৫৩