পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

কঠিন। দাদার প্রতি অপমান ওর ঘরের মধ্যে উদ্যত, তাকে একটুও নাড়া দিতে ওর অসহ্য সংকোচ।

 কুমুর মুখের ভাব দেখে নবীনের মন ব্যথিত হয়ে উঠল। বললে, “ভাবনা ক’রো না বউদিদি, আমরা সব ঠিক করে দেব, তোমাকে কিছু বলতে কইতে হবে না।”

 দাদার কাছে নবীনের শিশুকাল থেকে অত্যন্ত একটা ভীরুতা আছে। বউদিদি এসে আজ সেই ভয়টা ওর মন থেকে ভাঙালে বুঝি।

 কুমু চলে গেলে মোতির মা নবীনকে বললে, “কী উপায় করবে বলো দেখি? সেদিন রাত্রে তোমার দাদা যখন আমাদের ডেকে নিয়ে এসে বউয়ের কাছে নিজেকে খাটো করলেন তখনই বুঝেছিলুম সুবিধে হল না। তার পর থেকে তোমাকে দেখলেই তো মুখ ফিরিয়ে চলে যান।”

 “দাদা বুঝেছেন যে, ঠকা হল, ঝোঁকের মাথায় থলি উজাড় করে আগাম দাম দেওয়া হয়ে গেছে, এদিকে ওজনমতো জিনিস মিলল না। আমরা ওঁর বোকামির সাক্ষী ছিলুম তাই আমাদের সইতে পারছেন না।”

 মোতির মা বললে, “তা হোক, কিন্তু বিপ্রদাসবাবুর উপরে রাগটা ওঁকে যেন পাগলামির মতো পেয়ে বসেছে, দিনে দিনে বেড়েই চলল। এ কী অনাছিষ্টি বলো দিকি।”

 নবীন বললে, “ও মানুষের ভক্তির প্রকাশ ওই রকমই। এই জাতের লোকেরাই ভিতরে ভিতরে যাকে শ্রেষ্ঠ বলে জানে বাইরে তাকে মারে। কেউ কেউ বলে, রামের প্রতি রাবণের অসাধারণ ভক্তি ছিল, তাই বিশ হাত দিয়ে নৈবেদ্য চালাত। অমি তোমাকে বলে দিচ্ছি, দাদার সঙ্গে বউরানীর দেখাসাক্ষাৎ সহজে হবে না।”

১৭৫